সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
শোকের উচ্চারণ আমার কাছে বরাবর বড্ড দ্বিধার; সে কুণ্ঠা সর্বতোভাবে স্বীকার করেও সন্দীপদার আন্তরিকতাকে অস্বীকার করা গেল না।
চলে যাওয়া বিষয়টাই অনভিপ্রেত। কোনরকম বাস্তবিকতার দোহাই অথবা মৃত্যু সম্পর্কিত রোমান্টিকতা দিয়ে এটিকে আমি আড়াল করতে পারি না, চাইও না।
আর সুব্রত কাকু এমন একজন ধীরস্থির মানুষ হঠাৎ তাড়াহুড়ো করে কিভাবে হ্যাঁ থেকে না হয়ে গেল বুঝেই উঠতে পারলাম না, মেনে নেওয়া তো অনেক দূরের কথা!
জীবনের যে সময়টা সবচেয়ে টলটলে, আয়নাতে মুখ দেখার মত আমি টাকে দেখতে পাওয়া যায় সেই সময় থেকে সুব্রত কাকু আমাকে চেনে। পড়াশোনার চাপে ওষ্ঠাগত, অভিমানী অথচ অভিমান নিয়ে বিব্রত সেই ছল ছলে চোখ কিশোরীর তেমন বন্ধু ছিল না। ছিল কয়েকজন কাকু। রোববারের আড্ডা থেকে শুরু করে চকলেট আর গল্পের বইয়ের রূপকথা পেরিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে আমির খানের ফ্লপ সিনেমা দেখা পর্যন্ত অনায়াস বিচরণ ছিল সেই যোগাযোগে। সুব্রতকাকুকে তো সিনেমা দেখতে দেখতে হিন্দিটা বুঝিয়ে পর্যন্ত দিতে হতো। নাছোড়বান্দা সেসব দিন আজকের আমিটাকে তৈরি করেছিল। তাই হয়তো আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি পড়াতে গিয়ে কখনো নোটবুক খুলতেই হয়নি। সুব্রতকাকুর সেন্স অফ হিউমার এবং টাইমিং অফ হিউমার একটা অসম্ভবপ্রায় পর্যায়ের ছিল আর ছিল কথা শুনতে পারার নমনীয়তা। অন্তরমহলের কাছাকাছি থাকলে আলাদা করে সে মানুষকে চেনা হয়ে ওঠে না। আমিও তাই তেমন করে তাকে চিনতে পারিনি বা চেনার কখনো চেষ্টাই করিনি। আমাদের সম্পর্ক এতটাই সহজাত ছিল যে কখনো মনেই হয়নি সেই সম্পর্কের তাৎপর্য নিয়ে ভাবতে বসি।
আজও তাই ভাববো না।
আজকের এই মানসিক কংক্রিটের রাজত্বে যে কটা সবুজ মুখ সব সময় আদর করার জন্য খোলা থাকতো তাদেরই একজন আমার সুব্রত কাকু। অতীতের পাল্লা যত ভারি হচ্ছে সময় তত বেশি বুঝিয়ে দিচ্ছে ,স্নেহ বড় বিষম বস্তু। গোটা পৃথিবী যখন সূর্যের নিচে দাঁড় করিয়ে কান ধরে ওঠবোস করাতে চায় তখনো দু'চারটে হাত এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বোঝায় ",এই এক ফোঁটা পুচকি মেয়ে !এত ভাবনা কিসের তোর? " তেমন একটা হাত হঠাৎ নেই হয়ে গেল।
এই দগদগে সত্যিটা কে মেনে নেওয়ার মতো বড় এখনো হয়ে উঠতে পারলাম না।