সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
শৈবম হরিপ্রিয়া সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় না। শুধু এইটুকু জানা যায় যে তিনি মণিপুরের মেয়ে, মেইতেই সম্প্রদায়ের। একাধারে কবি ও জননী এবং তিনি উচ্চশিক্ষিত। এমনকি ইন্টারনেট ঘেঁটেও এর বেশি কিছু তথ্য পাওয়া যায় না। জানা যায় না তাঁর জন্মতারিখ, জানা যায় না মণিপুরের ঠিক কোন্ অঞ্চলের তিনি বাসিন্দা। তবে আন্দাজ করা যায় মোটের ওপর তাঁর বয়স এখন ৪১ বছর হবে। পত্রপত্রিকা (যার মধ্যে আছে সাহিত্য আকাদেমির ‘ইন্ডিয়ান লিটারেচার’ পত্রিকা) ছাড়াও এ যাবৎ যেসব সংকলনে তাঁর কবিতা বেরিয়েছে, সেগুলি হল ‘সেন্টারপিস’, ‘এ ম্যাপ কল্ড হোম’, 40 আন্ডার 40, হোমওয়ার্ড (তাঁরই সম্পাদিত) এবং এই সংকলনটি – ‘ট্যাটুড উইথ ট্যাবু’, যেখান থেকে অনূদিত কবিতাগুলি নেওয়া হয়েছে।
(অংশবিশেষ)
প্রিয় জাতীয়তাবাদীরা
যে বর্ণের জাতীয়তাবাদীই হও না কেন
সকল বর্ণের জাতীয়তাবাদীকে বলছি
তোমরা সবাই আমার কাছে গেরুয়া
যদি পারতাম
তোমাদের সঙ্গে বাক্যালাপ করতাম
টাউন হলগুলো ভরিয়ে দিতাম বাদপ্রতিবাদে
কিন্তু তোমাদের কথাগুলো
শুধুমাত্র গভীর রাত্রে এসে পৌঁছয়
বেনামে
ঘৃণামিশ্রিত মন্তব্য
আর হুমকিসমেত....
১
মুলাকাৎ হচ্ছে একটা সময়
যখন মেয়েরা জেলে পুরুষদের সঙ্গে দেখা করে
মেয়েদের সঙ্গে দেখা করতে কেউ আসে না,
যেখানে তারা বন্দী থাকে,
আর নিজেদের ভাবনার মধ্যে ঘুরপাক খায়,
জেলের কুঠুরি হচ্ছে যাবতীয় জীবসত্তার নির্মিত আধার।
কবিরা অপ্রয়োজনীয়। কবিতায় কিছু আসে যায় না অথবা সব কিছু আসে যায়।
ওরা বলে, একবার যদি তুমি সত্যিকারের জেলে যাও
রূপকার্থক কিছু একটা মস্ত ঠাট্টা।
আমার ভাই একবার জেলে গিয়েছিল, অযথা, দুঃখের বিষয় কোনো উল্লসিত হবার কারণে নয়।
আমি জানি না তার কেমন লেগেছিল,
আমরা কথা বলি না।
কচিৎ কদাচিৎ আমি শুধু সিনেমাতে দেখেছি
আইন হাতে তুলে নেবার জন্যে
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পর নায়ক বেরিয়ে আসে মুহূর্তের মধ্যে
সর্বদাই একজন নারী সেখানে অপেক্ষায় থাকে
জেলের বাইরে সেন্ট্রাল জেলের দিকে তাকিয়ে থাকা নীল আকাশের নিচে।
২
ডিটেনশন হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ থেকে জেল—বাড়ির দিকে আদ্ধেক পথ যাওয়ার মতন।
কিস্তিতে মারা যাওয়া, ক্ষীণ আশা নিয়ে বেঁচে থাকা।
ভুল করবেন না; জিজ্ঞাসাবাদ কোনো প্রশ্ন নয়।
জিজ্ঞাসাবাদ হল বেফাঁস কোনো কথা থেকে সত্য বের করে আনার জন্য নিগ্রহ।
৩
এরকম একটা গুজব আছে যে কমবয়সীরা জেলে যায় বড় হয়ে ওঠার জন্য।
অনেক পরে আমরা আবিষ্কার করেছি গুজবটা অসত্য।
জেল বাড়িগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে
মানবতার প্রমাণ সংগ্রহের জন্যে।
শুঁকে শুঁকে বের করে ধ্বংসের
ভবিষ্যৎবাণী করা কবিদের আর
বিনাবিচারে আটকে রাখে,
যার থেকে উদ্ধারের আশা নেই
উদাসীনতা হচ্ছে এমন এক বৈশিষ্ট্য,
আইনে যার জন্যে কোনো শাস্তি নেই।
চল একটা খেলা
খেলা যাক
তোমার রাজ্য আর আমার কর্পোরেট সংস্থাকে
[একসাথে] ঢালাই করি
নদীর অতল থেকে জোর করে
খনিজ তুলে আনার জন্যে
পাহাড়ের ভেতর থেকে জোর করে
বক্সাইট বের করে আনার জন্যে
অরণ্যের গভীর থেকে জোর করে
কাঠ কেটে আনার জন্যে
চল একটা খেলা
খেলা যাক
তোমার শব্দগুচ্ছ আর আমার শক্তির খেলা
মানুষজনকে বাস্তুহারা করার জন্যে
চাষিকে তার চাষের জমি থেকে
উৎখাত করার জন্যে
চল একটা খেলা
খেলা যাক
কিস্তিমাত হয়ে যাওয়া এই দাবার বোর্ডে
এস আমরা জমিগুলো আর
যত গৃহদেবতাকে* দখল করি
বয়ে যেতে দাও শুখনো নদীগুলোকে
আমাদের তৃষ্ণা নিবারণ করতে
পাহাড়গুলো উগরে দিক সোনা
আমাদের ক্ষুধা নিবারণ করতে
আর যখন গোটা পৃথিবীটা যাবে শুকিয়ে
চল আমরা দখল করি মহাবিশ্ব আর গ্রহতারাগুলো।
*মণিপুরের মেইতেই পৌরাণিক কাহিনি এবং ধর্মে নানা ধরনের গৃহদেবতা রয়েছে, যাদের মধ্যে লাম লাইস প্রধান।
সূত্রপাত
আমি ভুলতে শুরু করেছি
তোমার ঠোঁটের স্বাদ,
তোমার ত্বকের লবণাক্ত অনুভব,
তোমার আনন্দময় বেদনার্ত মুখ
আমি ভুলতে শুরু করেছি
তোমার পিচঢালা নুড়ি বিছানো রাস্তাগুলোকে,
তোমার বারিধারার অমৃতকে,
তোমার নির্মল আকাশের চন্দ্রমাকে
আমি পালাতে শুরু করেছি
তোমার বাহুবন্ধন থেকে,
তোমার প্রচণ্ড বজ্রনির্ঘোষ থেকে,
তোমার দেশপ্রেমিকদের থেকে,
আর তোমার অগুন্তি অনুরাগীদের থেকে
আমি শুরু করেছি তোমাকে
তাড়া করতে
যে পূজার বেদি আমি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম
সেখান থেকে,
যেসব দেবদেবীর মূর্তি আমি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম
সেখান থেকে,
অঙ্গনের তুলসিমঞ্চ থেকে
আর একটা শেকলের জন্যে
আমি শুরু করেছি প্রার্থনা
আমার নখের জন্যে অন্য একটা নখপালিশ
প্রতিশ্রুতি আর প্রতিশ্রুতি
পাওয়া গেল না
জানি না কেন তুমি আমাকে
হাতে চাঁদ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে
আর আমার নখে লাগিয়ে দিয়েছিলে
তোমার প্রতিশ্রুতির কালো দাগ
অনুতাপ নিয়ে বেঁচে থাকা আমার
আর তবু আরো পাঁচ বছর
আশাবাদী যেহেতু আমি
তুমি আমাকে দেখতে পাবে
লাইনে দাঁড়িয়ে আছি
গমগমে স্কুলের
পাথর আর ধুলোর মধ্যে
যার মাথার ওপর তোমার প্রতিশ্রুতির ছাদ নেই
দাঁড়িয়ে আছি ছোপটার অপেক্ষায়
তোমার দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো মুঠোর মধ্যে গোপন করে
যেগুলো পিছলে নেমে
গণতন্ত্রের স্বপ্নের বাক্সে
আরো পাঁচ বছরের জন্যে তালাবন্ধ হয়ে যাবে
মিথ্যে আর মিথ্যে আর মিথ্যে
আর তবু প্রেমোন্মাদ দুর্ভাগা প্রেমিকের মত
আমি বিশ্বাস করেছি
ভাবি, যদি আমার নখের জন্যে অন্য কোন নেলপালিশ
বেছে নিতে পারতাম।
২
জসিন্তা কেরকেট্টার জন্ম ১৯৮৩ সালে ঝাড়খন্ডের পশ্চিম সিংভূম জেলার মনোহরপুর ব্লকের খুদপোষ গ্রামে। অঞ্চলটা সারান্ডা জঙ্গলের অন্তর্গত, পাশেই ওড়িশা। এই নারী ছোটবেলা থেকে অনুভব করেছেন তাঁর ভেতরে এক অঙ্গার, সেই অঙ্গারের প্রথম বহিঃপ্রকাশ ঘটে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অঙ্গার’-এ (হিন্দিতে অঙ্গোর)। দ্বিভাষিক (হিন্দি-ইংরেজি) প্রকাশক আদিবাণী, কোলকাতা; প্রকাশকাল ২০১৬। এখানে অনূদিত কবিতাগুলি অঙ্গার-এর অন্তর্ভুক্ত।
অঙ্গার-এর মুখবন্ধে জসিন্তা লিখেছেন, “শিশুকাল থেকে আমি টের পেতাম একটা অঙ্গার যেন আমার ভেতরে আটকা পড়ে আছে। বড় হতে হতে আমি প্রত্যক্ষ করলাম আমার মায়ের ওপর পারিবারিক অত্যাচার। অঙ্গারটা তখনই কবিতার রূপ নিতে শুরু করে।...সেই শৈশবেই আমি আরো দেখলাম কেমন করে আমাদের গ্রামে ঘনিষ্ঠ নিরীহ আত্মীয়স্বজনদের জমির লোভে খুন করছে আদিবাসী নয় এমন লোকজন। পরবর্তীকালে স্বাধীন সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার সময় গ্রাম এবং জঙ্গলগুলোতে ঘুরতে ঘুরতে আমি অনুভব করলাম জঙ্গলের গাছগুলোর পাতা বেয়ে শিশিরের পরিবর্তে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরছে রক্ত, যে রক্তে স্নাত হয়ে গেল আমার কবিতাগুলো।”
জসিন্তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘জড়োঁ কী জমিন’ বেরোয় ২০১৮ সালে। তাঁর ‘অঙ্গার’ এ পর্যন্ত অনূদিত হয়েছে জার্মান, ইতালীয়, ফরাসি ভাষায়। ‘জড়োঁ কী জমিন’ জার্মান ভাষায়। বেশ কিছু পত্রপত্রিকায় নিয়মিত তাঁর কবিতা বেরোয়, যার মধ্যে আছে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দি বিভাগের পত্রিকা ‘পরিচয়’, দিল্লির ‘নয়া জ্ঞানোদয়’, যুদ্ধরত আম আদমি’, ‘শুক্রবার’। পেয়েছেন ২০১৪ সালে আদিবাসী সাংবাদিক হিসেবে স্থানীয় আদিবাসী প্রতিরোধ আন্দোলনের ওপর প্রতিবেদনের জন্যে থাইল্যান্ডের ‘ইন্ডিজিনাস ভয়েস অফ এশিয়া অ্যাওয়ার্ড’। এবং এরকম আরো কিছু। কবিতাপাঠ করতে এবং সেমিনার ও ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতে ঘুরেছেন ইয়োরোপের বেশ কিছু শহরে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে—জার্মানি, স্যুইজারল্যান্ড, ইটালি, অস্ট্রিয়া। এবং আমেরিকার হার্ভার্ড এবং মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এখন স্বাধীন সাংবাদিকতার সঙ্গে সঙ্গে লেখেন কবিতা।
E-mail: jcntkerketta7@gmail.com
আজকাল আমি দেখি
মা বেরোচ্ছে,
প্রতিদিনই যেমন বেরোয়,
কিন্তু তার হাতে এখন
ঝুড়ি আর খন্তার বদলে
থাকে তিরধনুক।
পায়ে পায়ে আমি তাকে অনুসরণ করে
পৌঁছই ছোট পথটায়
সেখানে বেশ কিছু লোকের জমায়েত
আর সেই জমায়েত মা-কে গিলে ফেলে।
স্লোগান দিতে দিতে ভিড়টা এগিয়ে চলে
আর দূর দিগন্তে অদৃশ্য হয়ে যায়।
সে রাত্রে মা বাড়ি ফেরে
মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ,
কপাল থেকে গড়াচ্ছে গাঢ় লাল রক্ত।
একদৃষ্টে মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে
আমি তার রক্তের ধারাটাকে স্পর্শ করি
আর টের পাই নিজের রক্ত
শিরায় শিরায় ফুটছে।
সেদিন মা আমাকে কোলে টেনে নিয়েছিল,
আর শুধু বলেছিল,
“আমরা আমাদের জমির জন্যে,
আমাদের মাটির জন্যে
লড়াই করছি, লড়াই করছি
নিজেদের অস্তিত্বকে বাঁচাতে।
তুমিও আমার পরে
এই লড়াইটা চালিয়ে যাবে।”
হাতে তিরধনুক নিয়ে মা
পরের দিনও যাত্রা করেছিল।
রাত নেমে এল, তার দেখা নেই।
আমি ফোঁপাতে ফোঁপাতে অন্ধকারে বসে রইলাম,
বসে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম
গোধূলি নেমে আসা থেকে
ভোরের প্রথম আলো ফোটা পর্যন্ত,
কিন্তু মা আর ফিরে আসে নি।
বছরের পর বছর ঘুরে গেল বুঝতে
মা যে সেদিন তিরধনুক হাতে
বেরিয়ে গিয়েছিল
সেটা একটা দৃঢ় সঙ্কল্প নিয়ে,
ফিরে আসার জন্যে নয়।
আজ আমি মায়ের সেই স্বপ্নটা
বাঁচানোর জন্যে লড়াই করি।
লড়াই করি
আমার বুকের গভীরে
খোদাই হয়ে আছে
যেসব শতাব্দী-প্রাচীন ব্যথা আর যন্ত্রণা
সেগুলো নিয়ে।
ওরা হয়ত দেখে শুধু জঙ্গিপনা,
কিন্তু ওরা দেখতে পায় না
এখনো টাটকা এখনো দগদগে
আমার শতাব্দী-প্রাচীন ক্ষতগুলো,
ওদের নখরের দাগে বিষে জর্জরিত হয়ে
আমার শরীর আমার আত্মায়
পরিব্যাপ্ত হয়ে থাকা ক্ষতচিহ্নগুলো।
অন্যরা শুধু দ্যাখে
আমার জঙ্গল, আমার জমি,
আর
আমার হাতে অস্ত্র।
সারান্ডার জঙ্গল থেকে বেরিয়ে
লোকে অন্য একটা গ্রামের দিকে চলেছে।
মেয়েরা চলেছে তাদের
বাচ্চাগুলোকে পিঠে বেঁধে,
বুড়োরা চলেছে লাঠিতে ভর করে
টিলাগুলো পেরিয়ে,
কমবয়সীরা চলেছে টিলাগুলোর
ওপর লাফাতে লাফাতে,
আর, বাচ্চারা গুনতে গুনতে চলেছে
শাখুয়া* গাছ।
কোনো প্রতিবাদ মিছিলের জন্যে একজোট হচ্ছে না তারা,
একজোট হচ্ছে একটা ফুটবল টুর্নামেন্ট দেখতে,
যে টুর্নামেন্টে বিজয়ীর হাতে তুলে দেওয়া হবে একটা ছাগল।
যে মুহূর্তে একটা বাচ্চা
তার মায়ের বুকের দুধ ছেড়ে একটু বড় হয়,
তাকে সারান্ডা যুব সঙ্ঘের সদস্য করে নেওয়া হয়,
যখন নাকি পরদার অন্তরালে অন্য কিছু ঘটতে থাকে।
বইয়ের পরিবর্তে একটা করে ফুটবল ধরিয়ে দেওয়া হয়
প্রতিটি হাতে, যে হাত কোনো এক দিন
অবৈধ খনিজ উত্তোলনের বিরুদ্ধে
প্রতিবাদে যোগ দিতে পারে।
ফুটবল টুর্নামেন্টের ট্রফি হিসেবে ছাগল পাওয়া হল
বই আর পড়াশোনায় লাথি মেরে দেওয়া।
ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবে বাচ্চাটা
ফুটবলের আফিমের নেশায় বুঁদ হয়ে যায়।
খেলার নেশায় ঢুলুঢুলু আর দুর্বল দুটি চোখ
দেখতে পায় না
ফুটবলের এই জয় পরাজয়ের ওপরেও আছে
তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।
ময়দানে উদ্যমের শেষ বিন্দু পর্যন্ত উজাড় করে দেওয়ার পর
সে টের পায় তার শরীরে রক্তচোষা জোঁকের মতন
কিলবিল করছে খিদে
আর ঠিক তখনই
তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় বেলচা আর কোদাল।
এবং সে,
পেলে মারাদোনা নেইমার বা মেসি হবার স্বপ্ন ছেড়ে দিয়ে
আপন মাটি-মা’য়ের সঙ্গে ছলনা করে
বনে যায় নির্মমভাবে
তার গর্ভ চিরে ফেলা অসহায় মজদুর।
খনি কোম্পানির দালালরা
প্রতিটি গ্রামের দরজায় টোকা দেয়।
যেই না খিদেয়, অসুখে, বেকারির
জ্বালায় এবং অসহায়তায়
দীর্ঘশ্বাস ফেলে কেউ,
তার মুখে গুঁজে দেওয়া হয় খাবার,
ওষুধপত্র, বাসনকোসন, কাপড়জামা।
এবং গোটা পরিবারকে আর তাদের আত্মীয়স্বজনদের যৎসামান্য পারিশ্রমিকে নিয়ে যাওয়া হয়
মজদুর করে।
বিকাশের নামে এখানে এখন
চার-ছয় লেনের রাস্তা হচ্ছে।
কিন্তু কংক্রিট আর অ্যাস্ফাল্টের ওপর
কাজ করছে যেসব মজদুর
তারা জানে না সারান্ডায়
ষড়যন্ত্রের আর কতগুলো রাস্তা আছে?
*শাল।