সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
আমি অভিমন্যু। আজ আমার জন্মদিন। জন্মদিনে আমি আপনাদের সবাইকে একটা উপহার দিতে চাই। চমকে গেলেন তো? স্বাভাবিক। জন্মদিনে বার্থ ডে বয়ের উপহার পাওয়াটাই দস্তুর। কিন্তু আমি সে বান্দা নই। ওসব রিটার্ন গিফট টিফট নয়, আমি নিজে আমার জন্মদিন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে একটি উপহার প্রদান করতে চাই। এখানে ‘দিতে চাই’ বললেই হত, কিন্তু এই যে তার বদলে আমি ‘প্রদান করতে চাই’ বললাম, এতেই প্রমাণ হয়, আমি আর পাঁচজনের থেকে অনেকটাই আলাদা। আ্যাবভ আ্যাভারেজ। কথাটা অহঙ্কারী শোনায় জানি, তবে অহঙ্কার আমার সম্পদ।
অভিমন্যু নাম হলেও ওই নামে আমাকে কেউ চেনে না, চিনুক, আমি তা চাইও না। কী মরতে মহাভারত খুঁড়ে আমার নাম বেছে আনতে হয়েছিল মা বাবাকে, সে আমি আজও বুঝি না! আমার ডাকনাম বুম্বা। সেই নামকেই আমি ছেঁটে করে নিয়েছি, বুম! আমার যখন দশ বছর বয়স, তখনই আমার নামের এই আধুনিকীকরণ আমি সম্পন্ন করি। আর সেদিনই ঘোষণা করে দিয়েছিলাম, আর চোদ্দ-পনেরো বছরের মধ্যে আমি এমন একটা কিছু লঞ্চ করতে চলেছি, যা দেখে সারা পৃথিবী একযোগে বলে উঠবে ‘ বুম বুম বুমকা!’
বাবা- মা হাঁ করে আমার কথা শুনছিল। আমি জানি, ওদের ভেতরটা খলবলিয়ে উঠছিল, এই সব কথা ওরা আত্মীয় মহলে, পাড়া প্রতিবেশীর কাছে রাষ্ট্র করে দেবার জন্য। কিন্তু আমি ওদের না করেছি। বলেছি, আমাকে প্রমোট করতে গেলে তোমরা হেদিয়ে পড়বে! আমাকে ঠিক ঠিক করে তুলে ধরা, আমার সমগ্র প্রতিভাকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে পরিচয় করানো, এসব তোমাদের মতো পাতি মধ্যবিত্তের কম্মো নয়! ওসব যা করার, তা আমিই করব। সেলফ-প্রমোটিং। লোকে গুগল খুলে দেখে নেবে সেসব!
আমার কথা শুনে বাবার চোখ গোল্লা গোল্লা হয়ে গেল! মা কেমন যেন থুম মেরে গেল!
আসলে ছোটবেলা থেকেই আমাকে বুদ্ধিমান করে তোলার সখ বাবার! ছোটবেলা কেন, জন্মের আগে থেকেই। সে জন্য মা কনসিভ করার সময় থেকেই বাবা মা’কে মাছের মাথা খাওয়াতো! দু’ বেলা। খেতেই হবে । কোনো ওজর আপত্তি শুনত না। একদিন নাকি গায়েই হাত তুলতে গিয়েছিল। মা ঘুরিয়ে, ক্যাজুয়ালি ফোর এইট্টি শব্দটা ছুঁড়ে দেওয়াতে সে যাত্রায় ম্যানেজ হয়েছিল। মা’কে যেদিন নার্সিং হোম থেকে ছাড়ল, সেদিনই আমাকে নিয়ে বাবা কিডস হেভেন স্কুলের সামনে সেলফি তুলে, ঘরে ফিরেছিল। তার কয়েকদিন আগে বাড়িতে মাছের মাথা আনা বন্ধ হয়েছে! মোটমাট, আমি বেশ বুদ্ধিমান হয়েই জন্মেছি। এটা মা, বাবা আমার জন্মের পরে পরে বলত, দশ এগারো বছর বয়স থেকে আমি নিজেই বলি।
অল্পবয়সে তাক লাগিয়ে দেবার মতো আমি অনেক কিছুই ঘটিয়েছি। যেমন যখন হামাগুড়ি দিতাম, তখনই নাকি আমি বেশ কয়েকবার খবরের কাগজের ওপর পটি করে দিয়েছি! অথচ একই উদ্দেশ্যে কাগজ পেতে দিলে আমি ইগনোর করতাম! এসব মায়ের মুখে শোনা। বাবা মা’কে বলত , দেখেছ, কীভাবে মিডিয়ার এগেনস্টে প্রতিবাদ করছে! সঙ্গে সঙ্গে মা সহমত হয়ে বলত, অথচ আমরা প্রতিবাদ করতে বললে করছে না! অদ্ভুত!
আমি উৎসাহের চোটে ইতিহাস ঘাঁটতে শুরু করলাম। ইতিহাস মানে সেই ইতিহাস, যা আঙুলের ডগায় উঠে আসে! ইনস্ট্যান্ট। তবে এতটাই ক্ষিপ্র তার গতি, যে সবসময় তা সত্যি মিথ্যের ধার ধারে না! এইখানে আপনাদের চুপিচুপি বলে রাখি, এই রকম একটা ‘আঙুল ছোঁয়া তথ্যবমন সহায়ক’ আকর বানানো আমার পরবর্তী প্রোজেক্ট। গুগলের মতো। তবে তার নাম কী গুল দেব, এখনো ভাবিনি। সে যাক গে! আজকে আমার প্রথম প্রোজেক্ট প্রেজেন্টেশনের দিন। আপনাদের কাছে।
ছোট বয়সে কার কীরকম বুদ্ধির বহর রেকর্ড করা আছে, আমি দেখতে চাই! এই আঙুলের পরশমণিতে। পেলাম চণ্ডীদাসের খুড়োর কথা। ‘খুড়োর যখন অল্পবয়স, বছরখানেক হবে’, তখন নাকি খুড়ো ‘গুংগা’ বলে কেঁদেছিল! আর তাতেই বোঝা গিয়েছিল, এই ছেলে বড় হয়ে কিছু একটা হবে। অতএব, আমি আমার পটির বিষয়টাও আমার ওই প্রজেক্টে আপলোড করে দেবার কথা ভেবে রাখলাম!
এই ভাবে, বুদ্ধির জমিতে ফসল ফলাতে ফলাতে, আমি বাবা- মা’র হাম দো, হামারা একমেবদ্বিতীয়ম হয়ে চব্বিশে পড়লাম। আমি যখন আঠারোতে পা দিলাম, তখন আমার জন্মদিনের প্রজেক্ট হিসেবে আমি একটা যন্ত্রমানুষ বানাবার পরিকল্পনা করি। অনেকটা প্রফেসর শঙ্কুর বিধুশেখরের মতো। আবার একেবারেই বিধুশেখরের থেকে আলাদা। আজ ছ’বছর বাদে সেই প্রজেক্ট শেষ হল। আমার সেই যন্ত্রমানুষ এখন বাজারে নামতে তৈরি!
বাবার ইচ্ছে, আমি সাংবাদিক সম্মেলন করে আমার এই আবিষ্কারের ডেমো দিই। কিন্তু আমি চাই, আগে আপনাদের কাছে একবার দেখাই এই যন্ত্রমানুষ।
নাম দিয়েই শুরু করি । আমার এই যন্ত্র-মানুষের নাম পরামনু। মনু, পরাশরের ব্লেণ্ড। পুরোটাই দেশীয় প্রোডাক্ট ! এটা সবাই খুব খায়। দ্বিতীয়ত, পরামনু শব্দটায় একটা পরমাণু শব্দের উচ্চারণগত অনুষঙ্গ আসছে। ফলে পুরো ব্যাপারটায় একটা ‘সায়েন্স, সায়েন্স’ ফ্লেভার আনা গেছে।
আরেকটা কথা। ওই যন্ত্র বলে, চৌকো চৌকো মাথা, হাত পা সব চৌকো, আগাপাশতলা সব যন্ত্রের মতো যান্ত্রিক, ঠিক এমনটা আমি করতে চাইনি। আমি চেয়েছি, আমার এই যন্ত্রমানুষের একটা ‘মন’ থাক। এত বছরের পরিশ্রমে আমি ওর মধ্যে ‘মন’ স্থাপন করতে সফল হয়েছি। প্রথমবার ‘মনে’র উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য আমি পরামনুকে বলেছিলাম, আজ ভোরে ও পাড়ার পঞ্চানন বাবু মারা গেলেন। তুমি দুঃখিত হলে না তো! পরামনু বলল, ‘মনে’ ছিল না! নিশ্চিত হলাম, পরামনু’র একটা মন আছে! এরকম হরেক কিসিমের পরীক্ষা করে ওকে ‘মন’নশীল করায় সফল হয়েছি। তবে একটা বিশেষ পরীক্ষার কথা এখানে না বললেই নয়! খুব ইন্টারেস্টিং!
আমার এই যন্ত্রমানুষের সঙ্গে যেসব স্যুইচ দেওয়া আছে, তা সব বাংলায়। তেমনই একটি হল, ‘সংলাপ’। ওটা অন করে ওর সঙ্গে কথা বলা যায়। ওকে যা বলা হবে, ও তার উত্তর দেবে। মানে, আপনার সঙ্গে কথা চালিয়ে যাবে। আমি খানিকটা মজা করার জন্যই সংলাপ’ বাটন অন করে পরামনুকে প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা, কোনো ব্যাচেলর কি তার শাশুড়িকে বিবাহ করতে পারে?
পরামনু উত্তর দিল, আইনগত কোনো বাধা নেই।
-কোথাকার আইন?
-যে দেশের নাগরিক এই বিবাহ করবে।
-বেশ। আর বাস্তবত?
-বাস্তবতাও নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট দেশের ওপর।
আমি এবারে জানতে চাইলাম , তোমার কী ধারণা, তোমার এই স্টুপিডিটি আমার মতো উপভোক্তার কোনো সাহায্যে আসবে? পরামনু বেশ খানিকক্ষণ ব্লিঙ্ক করল। একটা হলুদ আলো জ্বলছিল, নিভছিল। তারপর বলল, এটাও নির্ভর করবে, তুমি কোন দেশের, তার ওপর। বলেই আবার ব্লিঙ্ক করতে থাকল। আমি বুঝলাম, পরামনু ক্লান্ত। আমি ওকে চার্জে বসিয়ে দিলাম।
এখন আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, টানা ছ’বছর খাটাখটনি করে এই যন্ত্রমানুষ তৈরী করার মানে কী! অর্থাৎ উদ্দেশ্য কী, আমার প্রজেক্টের। এটা খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন। সত্যি কথা বলতে কী, যখন এই কাজটা আমি শুরু করি, তখন স্রেফ কৌতূহলবশতই শুরু করেছিলাম। দেখি তো, এক পিস মানুষ বানানো যায় কি না, নিজের মতো করে! যে আমার হুকুম মতো কাজ করবে, প্রশ্ন করবে না, তর্ক করবে না। তর্ক করবে তখনই, যখন আমি ওকে সেটা করার বাটন টিপব। আর চার্জ ফুরিয়ে গেলে রিচার্জড হবার জন্য যাকে আমার ওপরই নির্ভর করতে হবে!
আমার সমবয়সীরা, আমার পরিকল্পনা শুনে বলেছিল, মানুষ কীভাবে ‘বানাতে’ হয়, আজকাল তা একটা বাচ্চা ছেলেও জানে! তুই তো দেখছি একটি ক্ল্যাসিক্যাল গাধা! মানুষ বানাতে লোহালক্কড় নিয়ে বসে পড়লি! সমবয়সীরা বললাম, কেন না, আমার কোনো বন্ধু নেই। এটা আমার অহঙ্কার! ‘কী জানি জন্মিতে পারে মম সমতুল’ এটা চিরকালই ভেবেছি, কিন্তু বসুধা বিপুল হলেও এখন আর তার সময় নেই! আমি অনেকটাই এগিয়ে আছি। আর এগিয়ে আছি বলেই আমি বুঝি, বন্ধু যদি করতেই হয় কাউকে, তাহলে নিজেকেই সেটা বানিয়ে নিতে হবে! পরামনুর ভাবনা অনেকটা সে কারণেও! সমবয়সী অর্বাচীনদের সে সব বলা বা বোঝানো বাতুলতা, পণ্ডশ্রম!
পরামনু হাঁটতে পারে, লম্বা লম্বা পা ফেলে। হাত দুটোকে সোজাসুজি সামনে পেছনে আন্দোলিত করে। মানে, কুচকাওয়াজের ভঙ্গিতে। কিন্তু নব্বই ডিগ্রি ছাড়া ডাইনে – বাঁয়ে ঘুরতে পারে না। ‘পিছে মোড়’ বাটন টিপলে ও ডান কিংবা বাঁয়ে প্রথমে নব্বই ডিগ্রি ঘুরবে, তারপর আবার নব্বই ডিগ্রি ঘুরে তবে পেছনে ঘুরবে। অর্থাৎ, ওর এই নব্বইয়ের চাল অনেকটা আড়াই চালের মতো, তবে বেশ সময়সাপেক্ষ। ফলে, ওর ডান, বাঁ অথবা পেছন ঘোরার সময়টুকুর মধ্যে আপনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার যথেষ্ট সময় পাবেন, ওকে আপনি এরপর কীভাবে চালিত করবেন। এর আমি নাম দিয়েছি অবস্থান-বান্ধব পরিস্থিতি।
পরামনুর আরেকটা বৈশিষ্ট্য হল, ওর চোখ নেই। তার মানে, ও দেখতে পায় না, তা কিন্তু নয়। ও কান দিয়ে দেখে। অর্থাৎ কিছু শুনেই ওর আভ্যন্তরীণ সিস্টেম সেটা ভিস্যুয়ালাইজ করার প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়। এরকমটা করার পেছনে আমার দুটো যুক্তি ছিল। প্রথমত, ইন্দ্রিয়-সংযুক্তি প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে আমি আমার প্রোডাক্টকে হালকা-পুলকা করতে চেয়েছি। এতে ব্যয়-সঙ্কোচও হয় অনেকটা। আবার বাহুল্য বোধেও ওর ইন্দ্রিয় ছেঁটে ফেলা দরকার বলে আমার মনে হয়েছে। সেই যুক্তিতেই ওর সারা শরীরে কোনো চামড়া নেই। কেন না, অনুভূতি বিষয়টা ওর জন্য বাহুল্য। অনুভূতি-হীন মন ওর পারফরম্যান্সকে উন্নত করবে বলে আমার বিশ্বাস।
বাইরে যে আবরণ ওর শরীরে দেখতে পাচ্ছেন, সেটা বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরী এক স্বচ্ছ ধাতব আস্তরণ। আমি এর নামকরণ করেছি, নিস্পৃহ। বাইরের কোনো ঘাত- প্রতিঘাত, টিপ্পনি, বা শ্লেষ, এমনকি প্রশংসা বা আদর, ভালোবাসা – এসব ওকে স্পর্শ করতে পারবে না। যদি জোর করে, কানের খুব কাছে গিয়ে, প্রাণপণে চেঁচিয়ে ওর নিন্দা বা প্রশস্তি করা হয়, বা, প্রেম নিবেদন করা হয়, তবে একটা নির্দিষ্ট ডেসিবেল পর ওর বধিরতা মোড চালু হয়ে যাবে!
তবে পরামনুর নাক আছে। শুধু আছে তাই নয়, তাকে যথেষ্ট সক্রিয় করে রাখা হয়েছে ওর শরীরে। আমি বরাবরই সচেতন ছিলাম, যাতে ওর ঘ্রাণ শক্তি সজাগ থাকে। এই জন্য ওর নাকের ভেতরে একটি মাইক্রো-স্কেল বসানো আছে, যার ওপরের প্রান্তের নাম সারমেয়-স্তর, নিচেরটার নাম করোনা-স্তর, যেখানে গন্ধবোধ শূন্য। গন্ধ না পাওয়ার একটা অভিজ্ঞতাও ওর থাকা দরকার। সবকিছুতেই গন্ধ পাওয়ার চেষ্টা ভালো কথা না। স্যুইচ চালিয়ে ওটা আমি নিয়ন্ত্রণ করি।
দৈনন্দিন বিষয়ে, অর্থাৎ কারেন্ট আ্যফেয়ার্সে পরামনু কতটা দড়, সেটা বোঝার আমি মাঝেমধ্যেই ওকে পরীক্ষার মধ্যে ফেলি। যেমন, ওকে আমি বললাম, রাশিয়া। ও বলল, যুদ্ধ।
-আমেরিকা।
-অস্ত্র।
-চীন।
-রহস্য।
-বাংলাদেশ।
-রহস্যতর।
-ভারতবর্ষ।
-তম।
-পশ্চিমবঙ্গ।
-আমার ভাবনা তুমি ভাবো, লোকে ভাবে ভাবি আমি!
সে আবার কী! আমি ‘বিশদে’ বাটন চাপ দিই। পরামনু গলগল করে বলে যায়, আমি কী ভাবে ভাবব, কখন ভাবব, কেন ভাবব, না ভাবলে কী হবে, বা হওয়া উচিত, সব বলে দেবে তুমি! আর তোমার বেলা আমি! এইভাবে কার ভাবাভাবি বেশি দর পেল, ভাবতে বসব দিনের শেষে! ততক্ষণে সূর্য ডুবে যাবে। আবার পরের দিন।
ওকে থামিয়ে দিতে ‘বিশদে’ বাটন আবার টিপলাম। দ্বিতীয় বার একই বাটনে চাপ দিলে উল্টো ফল হয়। মানে, পরামনু চুপ করে যাবে। তা নাহলে ও বকেই যাবে । জানি না, জ্ঞান দেবার ভাইরাস ওর মধ্যে বাই ডিফল্ট রয়ে গেছে কি না! কিন্তু, স্যুইচ তো আমার হাতে! ওর হলুদ আলো দপদপ করতে শুরু করল। বুঝলাম, ও অবস্থান-বান্ধব পরিস্থিতির অটো মোডে চলে গেল! আমি বিষয় বদল করে বললাম,
-প্রতিবাদ।
-ফেসবুক।
-বন্ধুত্ব।
-হোয়্যাটসআ্যপ।
আমার রোখ চেপে গেল। আবার বিষয় বদলালাম। খানিকটা সময় নিয়ে ভেবে বললাম, দুর্নীতি।
এবার পরামনুর বুকের ওপর ফিট করা ডিসপ্লে বোর্ডে ফুটে উঠল, ‘বিশদে’। মানে, ও ই আমার কাছে বিষয়টা বিশদে জানতে চাইছে, আমি ঠিক কী চাইছি। আমি সেখানে আঙুল ঠেকালাম। ডিসপ্লে বোর্ডে ফুটে উঠল, ‘পছন্দের দুর্নীতি’, আর ‘ নৈর্ব্যক্তিক দুর্নীতি’। আমি ফিচলেমি করে পছন্দেরটাতে আঙুল ঠেকালাম। পরামনু বলল, কার পছন্দ?
-আমার।
- তুমি কে?
- অভিমন্যু।
- সে কে?
- বুম্বা। সবাই বলে, বুম বুম বুমকা!
-সে কে?
প্রচণ্ড রাগ হল। নিজের সৃষ্টিকর্তাকে চিনতে পারছে না! এত কাঠখড় পুড়িয়ে তবে আর ওর মধ্যে ‘মন’ ঢোকানো কেন! দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, বাস্টার্ড!
পরামনু বলল, সব যন্ত্রই তাই। আপনি কে, স্পেসিফাই করুন। আমি আবার খানিকটা ভেবে বললাম, আমি, আমি মানুষ!
একসঙ্গে পাঁচটা লাল আলো ব্লিঙ্ক করা শুরু করল! অর্থাৎ শব্দটা পরামনু রিড তো করতে পারেইনি, তার আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাতেও বড়সড় গণ্ডগোল হয়ে গেছে! এবার বাইরের এই ভাইরাসের চাপে ওর ভেতরটা তছনছ হয়ে যাবে!
আমি আবার লড়ব। ছাড়ছি না! হাজার হোক, বুদ্ধিমান হিসেবে আমার নাম আপলোড করা আছে। বাজার তাই জানে! এখন আমি নিরুপায়!