সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
১.
১৯৬৮ সালে পাউলো ফ্রেইরি যখন ‘পেদাগজিয়া দো ওপ্রিমিদো’ বইটি লেখেন, সে বইয়ের বিষয়বস্তু ক্রমশ আলোড়ন তুলতে থাকে শিক্ষা ও সমাজকর্মীদের মধ্যে। বিশেষত, ১৯৭০ সালে বইটির ইংরেজি অনুবাদ ‘পেডাগজি অফ দ্য অপ্রেসড’ প্রকাশিত হওয়ার পর, বিপুল সাড়া পড়ে সমস্ত সংশ্লিষ্ট মহলেই। বিভিন্ন ভাষায় বইটি একের পর এক অনূদিত হতে থাকে। একদিকে যেমন প্রভূত সমর্থন ও প্রশংসা পেতে থাকে বইটি, অন্যদিকে এ বই নিয়ে বেশ উত্তেজনাও ছড়িয়ে পড়ে নানা স্তরে। বহু দেশে বইটি আপাতভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। এ বই প্রকাশের আগে, ফ্রেইরিকে দু-বার কারারুদ্ধ হতে হয়েছিল। চরম শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে না হলেও, এই কারাবাস তাঁর দীর্ঘদিনের কাজের জগতে একটা বড়োরকম প্রভাব ফেলে। এরপর নির্বাসনে থাকাকালীন, বলিভিয়া এমব্যাসির আশ্রয়ে কিছুদিন রিও ডি জেনেইরো-তে থাকলেও, বলিভিয়ার সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে অচিরেই সে-দেশ ছাড়তে হয় তাঁকে। প্রায় ১৬ বছর টানা তিনি নির্বাসনদিন কাটিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও। একজন শিক্ষাবিদ প্রসঙ্গে কথা বলতে বসেই, এই যে তাঁর নিপীড়নের ইতিহাসটির দিকে পাঠকের নজরটান একঝলকের জন্য হলেও ফেরানোর চেষ্টা করছি, তার একটা কারণ যদি হয় তাঁর বইয়ের নামটির (‘নিপীড়িতের শিক্ষাবিজ্ঞান’) যাথার্থ্য খোঁজা; তাহলে অন্য কারণটিতে অবশ্যই লুকিয়ে আছে একটি অবধারিত প্রশ্ন— কী এমন করছিলেন ফ্রেইরি, যাতে এতবার তাঁকে রাষ্ট্রীয় অবরোধের মুখোমুখি হতে হল? কী বোমা লুকোনো আছে এই বইটিতে, যাতে তাঁকে নিয়ে এত ভয়, এত চেপে দেওয়ার চেষ্টা?
এই বইয়ের মধ্যে দিয়ে আসলে সামাজিক ন্যায় আর শিক্ষায় সাম্যের গোড়াটি ধরে টান দিয়েছিলেন ফ্রেইরি। এমনই সে টান, যার প্রতিক্রিয়া থেকে এড়িয়ে বাঁচতে পারেনি উচ্চতম রাজনৈতিক সংঘও। তাঁর লেখায় তিনি প্রথমেই যাকে আক্রমণ করেছেন, তা হল ‘নৈঃশব্দ্যের সংস্কৃতি’। এই নৈঃশব্দ্য একদিকে পরিকল্পিত, অন্যদিকে এই নৈঃশব্দ্যই আগ্রাসনের হাতিয়ার। ফ্রেইরি বলছেন সমাজে অধিকাংশ মানুষ যে-কোনো বাধার মুখে পড়লে, প্রাথমিকভাবে কোনো প্রতিরোধের চেষ্টাই করে না। বিশেষ করে সেই বাধা যদি আসে তুলনামূলকভাবে অধিক শক্তিশালী কোনো ক্ষমতাযন্ত্রের হাত হয়ে, তখন সেই ক্ষমতাতন্ত্রের প্রতি ভীতি ও ভীতিজনিত মুগ্ধতাবোধ একটা সন্ত্রস্ত শ্রদ্ধাভাবের জন্ম দেয় মানুষের মনে। তার স্থিতাবস্থাকে একেবারে নাড়িয়ে দিতে পারার মতো খুব বড়ো মাপের ধাক্কা না খেলে মানুষ সহজে এই স্থিতিজাড্যের বুদ্বুদ থেকে বের হতে চায় না। বিনা প্রতিবাদে নিজের পরিস্থিতিকে প্রাথমিকভাবে সইয়ে নেওয়ার চেষ্টাই জারি থাকে বরাবর। কার্যকারণ সম্পর্কে হাজার বাহ্যিক সচেতনতাও কিন্তু মানুষকে তেমনভাবে প্রভাবিত করতে পারে না। তার সঙ্গে হওয়া যে-কোনো নিপীড়ন বা সমস্যাকে আলাদা করে দেখার প্রবণতা তার থাকে না। এই সমস্যাগুলোও যে বাহ্যিক কোনো শক্তিকেন্দ্র থেকেই উৎপন্ন, তা না বুঝে মানুষ ধরেই নেয় এটা একেবারেই তার নিজস্ব ব্যক্তিগত ক্ষতি এবং এই ক্ষতির মোকাবিলা করার প্রস্তুতি তার প্রায় থাকেই না। এই যে প্রায় হাল ছেড়ে দিয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে-থাকা, ফ্রেইরি কিন্তু নৈঃশব্দ্যের যাবতীয় দোষ এর ওপরে চাপিয়ে দেননি। তিনি স্বীকার করছেন, মানুষের ঘুরে দাঁড়াতে, কথা বলতে সময় লাগে। কিন্তু সেই সময়টুকু পেরিয়ে গেলে মানুষকেও চৌম্বকীয় আবেশে আবিষ্ট করে ফেলার মতো, কথা বলানো যায়, প্রতিবাদের ভাষা গড়ে দেওয়া যায়।
কিন্তু দুটো ক্ষেত্রে এই নৈঃশব্দ্যকে ভাঙাটাই হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ। আর সেই চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে লড়াটাই প্রকারান্তরে হয়ে দাঁড়ায় সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়াই, যে লড়াইটা শুরু করেছেন ফ্রেইরি। যে দুটো ক্ষেত্রের কথা এখানে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন ফ্রেইরি, আগেও বলেছি, তার একটা হল পরিকল্পিত নৈঃশব্দ্য, আর অন্যটা চাপিয়ে দেওয়া নৈঃশব্দ্য। বিষয়টা খোলসা করে বলা যাক। পরিকল্পিত নৈঃশব্দ্যের কেন্দ্রে থাকে বস্তুত ক্ষমতা। এই ক্ষমতাবৃত্তের ভেতরে বসে-থাকা মানুষগুলোই নির্ধারণ করতে চায়, কোন্ বিষয় নিয়ে কথা হবে, আর কোন্ বিষয় নিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হবে নীরবতার রাজনীতি। তাদের এই স্বোপার্জিত তূষ্ণীভাবকে আঘাত করতে পারে, এমন কোনো বিষয় নিয়েই কথা হোক, ঢেউ উঠুক, তা তারা চায় না। ফলে নিজেদেরকে কাচের দেয়ালের নিরাপদ আড়ালে রাখার মতো করেই নিজেদের চারপাশে তারা তৈরি করে ফেলে নীরবতার অভেদ্য বলয়। অবশ্যই এই একাংশ কখনওই সমাজের ‘অধিকাংশ’ নয়, অথচ অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক ক্ষমতা এদেরই বেশি। তাই এদের কথারও অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক দাম বেশি। ফলে এদের নিজস্ব নীতিনির্ধারিত নীরবতার খেসারত চিরকাল জুগিয়ে যেতে হয় সমাজের সেই আর-এক বৃত্তকে, যারা ‘অধিকাংশ’ হলেও, যাদের মাথার দাম নেই। আর সমাজ-পিরামিডের একেবারে ওপরদিকে বসে-থাকা সেই গুটিকয় মানুষ, যারা নিজেরা নীরবতার রাজনীতি নির্বাচন করে নেয়, সেই নীরবতাকে আরও দুর্ভেদ্য, আরও প্রশ্নহীন করে তোলার জন্য এই নীরবতার ভার তারা চাপিয়ে দিতে চায় সমাজের বাকি এই ‘অধিকাংশ’-এর ওপরেও। প্রাথমিকভাবে অবজ্ঞা দিয়ে, ঔদাসীন্য দিয়ে এবং ক্রমশ বলপ্রয়োগে, ভীতিপ্রদর্শন করে তারা বন্ধ করে দিতে চায় এই ক্বচিৎ কদাপি মুখ খুলতে-চাওয়া নিপীড়িত ‘অপর’-কে।
এখন প্রশ্ন হল, এই চাপিয়ে দেওয়া নীরবতার ভার নিপীড়িতরা কেন বহন করে? কেনই বা যত্রতত্র খুব সহজে মুখ খুলতে চায় না তারা? শুধুই কি ভয়-ভীতি, একা হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক? এখানেই এসেছে ফ্রেইরি-র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিশ্লেষণ। তিনি বলছেন, যারা প্রশ্ন তুলতে পারত, তারা আসলে নিজেদের শক্তিতে বিশ্বাসই করে উঠতে পারেনি কোনোদিন। তারা যে আদতে ব্যক্তি নয়, একা নয়, তারাই যে আসলে সমাজের সিংহভাগের প্রতিনিধিস্বর হয়ে ওঠার বলে বলীয়ান, এই সহজ সত্যিটা থেকে তাদের অবস্থান বহুদূরে। নীরবতার অভ্যাসে থাকতে থাকতে সাংস্কৃতিকভাবেই তারা আর বিশ্বাস করে উঠতে পারে না যে, সরব হওয়া যায়। ফ্রেইরি লিখছেন, “all of these individuals act as individuals rather than united more powerful force, and are ultimately limited by a learned helplessness.” এই ‘লার্নড হেল্পলেসনেস’ বা ‘অ্যাকোয়ার্ড হেল্পলেসনেস’ মনস্তত্ত্বেরও একটি খুবই প্রচলিত তত্ত্ব। বাংলায় আমরা একে ‘অনুশীলিত অসহায়তা’ কিংবা ‘অর্জিত অসহায়তা’ বলতেই পারি। এই অসহায়তা বস্তুত একটা বিশেষ মানসিক অবস্থা, যে অবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে আছে একাধারে নিষ্ক্রিয়তা এবং নিজেকে শক্তিহীন মনে করা। এই নিষ্ক্রিয়তা তখনই আসে, যখন কেউ দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে এমন কোনো নেতিবাচক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে থাকে, যা তার নিয়ন্ত্রণের অধীন নয়। আর এর ফলেই ক্রমশ সে তার পরিস্থিতিকে বদলে ফেলার যাবতীয় সক্রিয় প্রচেষ্টা একটু একটু করে থামিয়ে দিতে দিতে একসময় সম্পূর্ণত নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এমনকী, কোনোরকম পরিবর্তন ঘটানোর বিন্দুমাত্র ক্ষমতা যদিও বা তার থেকে থাকে, তবু পরিস্থিতির ওপরে তার যে কোনোমাত্র নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে, সেকথাও সে আর বিশ্বাস করতে চায় না। একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা বুঝিয়ে বলা যেতে পারে।
ধরা যাক একটি ছাত্র ক্লাসে কোনো একটি অঙ্ক পারল না। হয়তো তার শিক্ষক সেদিন খানিকক্ষণ আগেই অঙ্কটি বুঝিয়েছিলেন। তাই খাতায় অঙ্কটা না পারার কারনে প্রথমেই তার কপালে একটু বকা জুটল, কেন সে ক্লাসে মন দিয়ে পড়ানোটি শোনেনি। ধরা যাক, সেই প্রাথমিক বকাঝকার পালা সাঙ্গ হলে সেসব হজম করে ছাত্রটি সত্যিই আরও একবার চেষ্টা করল অঙ্কটা বুঝে নিতে। কিন্তু “আর-একবার বুঝিয়ে দেবেন?” এ প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে আরও একবার প্রত্যাখ্যান শুনতে হল, “এক অঙ্ক আর কতবার বোঝালে তবে তোমার মাথায় ঢুকবে?” ভয়ে চুপ করে গেল ছাত্রটি। দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করার কোনো সাহসই আর তার তখন নেই। বাড়ি ফিরে আরও একবার হয়তো সে অঙ্কটা নিয়ে বসার চেষ্টা করল, বাবা বা মায়ের কাছে। “অঙ্কটা পারিনি” বলামাত্রই প্রথমে তার দিকে ধেয়ে এল প্রশ্নবাণ— “বাকিরা পেরেছে?” “স্যার অঙ্কটা বুঝিয়ে দেননি?” দুটো প্রশ্নেরই উত্তর হ্যাঁ হওয়ার পর অবধারিতভাবে ছাত্রটির জন্য অপেক্ষা করছে তার মনোবল ভেঙে-দেওয়া তৃতীয় মন্তব্যটি, “ক্লাসে তাহলে কী করছিলে? পড়া একটুও মন দিয়ে শোনো না বলেই তো অঙ্ক পারছ না। তোমার দ্বারা কিছুই হবে না।” এইভাবে পরপর প্রত্যাখ্যাত হতে হতে, একই ভুলের শাস্তি বারবার পেতে পেতে এবং একই ভুল সংশোধনের চেষ্টার প্রতিটি ধাপে ধাক্কা খেতে খেতে একসময়ে ছাত্রটি হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে। অঙ্ক বুঝতে না পারলেও সে আর ফিরে প্রশ্ন করবে না। তার না-বোঝার ভার বাড়তে বাড়তে একসময়ে এমন জায়গায় পৌঁছে যাবে, যখন সে আর বিশ্বাস করতেই পারবে না যে, এই অঙ্কটা সেও করে দেখাতেই পারত। গোড়াতে সে যে বারবার অঙ্কটা বোঝার চেষ্টা করেছিল, সেই স্মৃতিও ক্রমশ মুছে যাবে, থাকবে শুধু প্রত্যাখ্যানের ভয়, আর অপারগতার জ্বালা। ‘অর্জিত অসহায়তা’-র একেবারে ধ্রুপদী উদাহরণ।
‘পেডাগজি অফ দ্য অপ্রেসড’ প্রকাশিত হওয়ার আগের বছরেই প্রকাশিত হয় ফ্রেইরির প্রথম বই ‘এডুকেশন অ্যাজ দ্য প্র্যাকটিস অফ ফ্রিডম’। এই দুই বইয়ের প্রেক্ষাপট জুড়ে আছে পাওলো ফ্রেইরির ব্যক্তিগত এবং নানা প্রতিষ্ঠানগত অভিজ্ঞতা। ব্রাজিলের এক অতি দরিদ্র জনপদে তাঁর বেড়ে ওঠা, পারিবারিকভাবেও আর্থিক অনটনের মধ্যে কাটে তাঁর শৈশব আর কৈশোর। এই চালচিত্র থেকে উঠে আসার কারণেই সম্ভবত ফ্রেইরির শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় ভাবনার শুরুতে বরাবর রয়ে গেছে তাদের কথা, যারা প্রথাগত শিক্ষার কাঠামোরও বাইরে। এখানেই ফ্রেইরির সবচেয়ে বড় সার্থকতা যে, তিনি তাঁর কাজের মধ্যে দিয়েই বারবার প্রমাণ করেছেন যে, শিক্ষা মানুষের অধিকার। এমনকী, যে বা যাঁরা সেই অধিকারের প্রয়োগ বা অনুশীলন করতে চান না, তাঁদেরও শিক্ষার অধিকার রয়েছে। সেইজন্যেই, ফ্রেইরি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে যত কথা বলেছেন, তার চেয়ে বহুগুণে বেশি কথা বলেছেন সাক্ষরতা নিয়ে। বস্তুত, ‘সাক্ষরতার লক্ষ্যে শিক্ষা’ এই বিষয়টিকে কিন্তু আজও শিক্ষাবিদ্দের বড়ো বড়ো আলোচনার পরিধি থেকে যতদূর সম্ভব ব্রাত্য করেই রাখা হয়। প্রথাগত শিক্ষার্থীর পড়াশোনার চ্যালেঞ্জ কিংবা উচ্চশিক্ষাকে বহনীয়, সহনীয় ও নমনীয় করে তোলার তাগিদে নানারকম দাওয়াই আর তত্ত্বকথায় ভরপুর হয়ে থাকে সেইসব গুরুগম্ভীর আলোচনাচক্র। সাক্ষরতা আর শিক্ষার মধ্যে একটা অনপনেয় দূরত্ব যেন অজান্তেই তৈরি হয়ে গেছে কবে, আর এখানেও অবশ্যই ক্রিয়াশীল ফ্রেইরি কথিত সেই নীরবতার রাজনীতি।
ফ্রেইরি কিন্তু তাঁর কর্মজীবনের শুরু থেকেই মাথা ঘামিয়েছেন সাক্ষরতা নিয়ে। ১৯৫৮ সালে বয়স্ক সাক্ষরতা বিষয়ক যে দ্বিতীয় অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হয় রিও ডি জেনেইরো-র জাতীয় স্তরে, সেখানে তিনি নিজে অংশগ্রহণ করেছেন। পেরনামবুকো রিজিওনাল কমিশন রিপোর্টের তৃতীয় থিম হিসেবে সামনে এসেছিল মোকাম্বো সংক্রান্ত একটি বিশেষ শিক্ষাবিষয়ক সমস্যা, সেক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। রিপোর্টে তিনিই ছিলেন প্রাইমারি কন্ট্রিবিউটর। এখন এই মোকাম্বো সমস্যার কথা একটু আলাদা করে বলা প্রয়োজন। মোকাম্বো ঠিক কোনো জায়গা বা বাসস্থান নয়। বরং বলা যেতে পারে, মোকাম্বো এক-একটা সম্প্রদায়। জনসংখ্যার নিরিখে এই সম্প্রদায়গুলোর আয়তন প্রায় এক-একটা ছোটো গ্রামের মতোই। আঠেরো থেকে উনিশ শতকের মধ্যে উদ্বাস্তু ব্রাজিলীয়রা এই সম্প্রদায়গুলো গড়ে তুলেছিল। নিজভূমে ব্রাজিলীয়দের এই উদ্বাস্তুর মতো আচরণ কিন্তু খুব স্বাভাবিক নয়। আসলে ব্রাজিল তখন পোর্তুগালের উপনিবেশ এবং পোর্তুগিজ ঔপনিবেশিক শাসকরা নানাভাবে অত্যাচার করত দেশীয় নাগরিকদের ওপরে, ইতিহাসে যার ক্রূরতম নিদর্শন হয়ে আছে ক্রীতদাস।
গোড়ার দিকে ব্যক্তিগত দাস নিয়োগের রীতি ছিল, কিন্তু খুব বেশিদিন আর এই পদ্ধতিতে সীমাবদ্ধ রইল না তাদের অত্যাচার। শক্তসমর্থ, কর্মদক্ষ এবং স্বাস্থ্যবান ব্রাজিলীয়দের শ্রম নামমাত্র বিনিয়োগেই কিনে নেওয়া যেতে পারে, এ ব্যাপারটা চোখে পড়তেই শুরু হল প্রথমে নিজেদের দেশে এবং ক্রমশ বাইরের দেশগুলোতেও ক্রীতদাস কেনাবেচার খেলা। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই রীতিমতো রাজার অনুমতিপত্র নিয়ে পোর্তুগিজরা দাসব্যাবসার রমরমা শুরু করে দিয়েছিল। আর একবার কেউ ক্রীতদাসে পরিণত হলে, তার পরবর্তী প্রজন্মকেও অবধারিত ক্রীতদাস হতেই হবে, এই ছিল শর্ত। ফলে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের প্রতিনিধিরা ছিল জন্ম থেকেই বিকিয়ে যাওয়া, বিনা মূল্যের দাস। এই ভয়াবহ জীবন থেকে বাঁচার তাগিদেই, দলছুট ক্রীতদাসরা একসঙ্গে ঘাঁটি গেড়েছিল ব্রাজিলের এমন সব ভৌগোলিক পরিধিতে, যেসব এলাকা দুর্গম, সহজে খুঁজে বের করাও মুশকিল। সেই সময়ে এইসব পলাতক ক্রীতদাসদের তৈরি করা ছোটো ছোটো গোষ্ঠীগুলোই হয়ে উঠেছিল এক-একটি মোকাম্বো।
কিন্তু পালিয়ে এসে স্বাধীন জীবনের লক্ষ্যে মোকাম্বো তৈরি করলেও এই জীবনে না ছিল স্বাতন্ত্র্য, না ছিল স্বাধীনতা। পালিয়ে বেঁচে থাকার জন্যই রাষ্ট্র এবং সরকারের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করে তাঁরা নিজেদের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ গোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক কাঠামোর অংশ না হওয়ায় বৈধ আইনের মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকরা যেসব নাগরিকত্বের অধিকার পেয়ে থাকেন, সেগুলোর কোনোটাই এঁরা পেতেন না। খাদ্য ও জীবনধারণের জন্য মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তাঁদের সামনে সবথেকে বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াল শিক্ষা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার আয়ত্তে মোকাম্বোর আধুনিক সদস্যদের নিয়ে আসাটা খুব সহজ কাজ ছিল না। অপ্রতুল জীবিকাও একটা সময়ে এদের কাছে খুব বড়ো প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে মোকাম্বোর সদস্যদের মধ্যে ক্রমশ অপরাধপ্রবণতা বাড়তে থাকে। গোপনে অভিযান চালিয়ে চুরি, ছিনতাই, দস্যুবৃত্তি, তোলাবাজির অভিযোগ এত জমা হয় যে, এই মোকাম্বোগুলি ব্রাজিল সরকারের দস্তুরমতো মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে। দেখামাত্র বন্দি করার নির্দেশ জারি হয় মোকাম্বোর পুরুষদের জন্য। ফলে মোকাম্বোগুলির মধ্যে ক্রমশ পাকিয়ে উঠতে থাকে সরকারবিরোধিতা এবং প্রথাগত শিক্ষাকে অস্বীকার করার প্রবণতা।
ফ্রেইরি কিন্তু মোকাম্বোগুলোর মধ্যেই সাক্ষরতা অভিযানের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু তিনি বরাবরই চেয়েছিলেন, তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিক পৃথিবীর নিয়মে মোকাম্বোগুলির শিক্ষাপদ্ধতিকে চালনা না করে, তাদের জীবনধারণের উপযোগী প্রকৃত শিক্ষায় তারা শিক্ষিত হোক। বাইরের যে পৃথিবীকে তারা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে নিজেদের মতো এক প্রতিস্পর্ধী দুনিয়া তৈরি করে নিয়েছে, আজ হঠাৎ সেই বাইরের পৃথিবী থেকেই নির্ধারিত কিছু চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষার পদ্ধতি তাদের জীবনে যে মোটেই কাজে লাগবে না, তা বুঝতে পেরেছিলেন ফ্রেইরি। সেইজন্যেই তিনি যখন মোকাম্বোগুলির উপযোগী সাক্ষরতা ও শিক্ষাতত্ত্বের পরিকল্পনা করলেন, সেখানে স্পষ্ট বললেন, বর্ণ চেনা, সংখ্যা চেনা, অঙ্ক করা, লিখতে পারা বা পড়তে পারার গতানুগতিক শিক্ষাপদ্ধতি তাদের জন্য নয়। বরং তাদের স্বাধীন ও স্বয়ংসম্পূর্ণ গোষ্ঠীজীবনে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারার ক্ষমতা, নেতৃত্বদানের গুণ, সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়িত্বপালন এবং জীবনের সবরকম ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করার মনোভাব।
২
একবার ফিরে দেখা যাক পাওলি ফ্রেইরি-র ‘নির্বাসিতের শিক্ষাবিজ্ঞান’ বইটি, বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন শুভঙ্কর চন্দ এবং তীর্থঙ্কর চন্দ (প্রকাশিত হয়েছে ‘তথ্য তক্কো অণু গ্রন্থমালা’ থেকে, প্রচ্ছদ: গৌতম মুখোপাধ্যায়)। ফ্রেইরির ভূমিকা আর চারটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত মূল বইটি। মূল বইটি ছাড়াও অনূদিত বইয়ে রয়েছে সলিল বিশ্বাসের লেখা ‘বঙ্গানুবাদের ভূমিকা’ এবং রিচার্ড শল-এর ‘প্রাককথন’।
পাওলি ফ্রেইরির ‘প্রিফেস’-এর দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের ব্যবহার করলেন conscientizacao শব্দটি। consciousness বা চেতনায়ন এবং conscience বা বিবেকায়ন— এই দুই শব্দের দ্যোতনা যেন মিশে গেছে conscientizacao বা conscientize (কনশিয়েনটাইজ) শব্দটিতে। এই শব্দটি সম্বন্ধে ফ্রেইরি পাদটিকায় লিখলেন, ‘এই শব্দটি আসলে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বগুলিকে বুঝতে শেখা এবং বাস্তব দুনিয়ার নিপীড়ক উপাদানগুলোর বিরুদ্ধে সক্রিয়-উদ্যোগ নেওয়ার কথাকেই বোঝায়’। ‘বঙ্গানুবাদের ভূমিকা’ অংশে সলিল বিশ্বাস এই শব্দটিকে আরও বিশদে ব্যাখ্যা করেছেন: “‘কনশিয়েন্টাইজ’ শব্দটিকে একটি দীর্ঘ বিস্তারের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দিকে এগোনোর পথের সঙ্গে তুলনা করে বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে। একদিকে যদি থাকে জ্ঞানার্জন পদ্ধতির (শিক্ষার্থী ও শিক্ষাব্রতী উভয়ে মিলিত ভাবে) চেতনায়ন (Consciousness অর্থে) বা জ্ঞানকে চেতনায় নিহিত করার প্রচেষ্টার আরম্ভ ও জারি থাকা, তাহলে অন্য দিকে থাকতে পারে জ্ঞানার্জন পদ্ধতির বিবেকীকরণ (Conscience অর্থে), জ্ঞান ও উপলব্ধিকে বিবেক-এ প্রবিষ্ট করিয়ে নিজেকে ও বাস্তবকে বা বাহ্যিক জগতকে শোষণ ও নিপীড়নের হাত থেকে মুক্ত করার প্রয়াসে ব্রতী হওয়া। একে হয়তো বিবেক-নির্মাণও বলা যায়। প্রথম প্রান্ত থেকে দ্বিতীয় প্রান্তে আরোহন একটি সচেতন, সক্রিয়, চলমান, মতাদর্শগত অগ্রসরতা, কোনোভাবেই তা বাইরে থেকে ‘চাপিয়ে’ বা ‘ভরে’ দেওয়া বা ‘আরোপিত’ নয়। এর মধ্যে কোনো তথাকথিত ‘নৈতিক’ চাপের ব্যাপার নেই, না আছে কোনো ‘পরিচালিত’ হওয়ার সম্ভাবনা। এ থেকে তৈরি হয়ে উঠবে পরিস্থিতির সচেতন মূল্যায়ন এবং তাকে পরিবর্তন করার তাগিদ সৃষ্টির প্রয়াস। পুরো প্রক্রিয়াটাকে ‘কনশিয়েন্টাইজেশন’ বলা যেতে পারে।” এই উদ্ধৃতিটিতে ধরা রয়েছে বইটার নির্যাস। প্রথম পরিচ্ছেদের মূল বিষয় ‘নিপীড়ক-নিপীড়িত’-এর সম্পর্ক। কিন্তু এই সম্পর্ক খুব সরলরৈখিক নয়। কারণ, এখানে তিনটি প্রবণতার প্রতি ফ্রেইরি মুখর। এক, নিপীড়িত তথাকথিত মুক্তির পর নিপীড়কের পথ ধরেই হাঁটতে চায়, অভিন্ন হয়ে যায় নিপীড়ক সত্তার সঙ্গে। দুই, মুক্তির ভয় বা স্বাধীনতার ভীতি নিপীড়িতকে তাড়িত করে, আর এর ফলেই হয় তারা নিপীড়কদের মতো হয়ে উঠতে চায়, নয়তো নিপীড়িত হয়ে বেঁচে থাকার মজ্জাগত অভ্যেস থেকে বেরতে চায় না। দায়িত্ববোধ আর স্বয়ংশাসিত হবার অধিকার প্রাপ্ত হওয়াই যে মুক্তির আবশ্যিক শর্ত, সে পথ নেওয়ার আত্মবিশ্বাস থাকে না, অথচ এই মুক্তি-সংগ্রামেরই হাত ধরেই গড়ে উঠতে চায় এই ‘পেডাগজি’। তিন, এই নিপীড়িতরা যখন আবিষ্কার করতে পারবে যে নিপীড়িতরাই নিপীড়নের আশ্রয়স্থল, লালন-পালনকারী, তখনই সম্ভব নিজেদের ‘পেডাগজি’ গড়ে তোলার। এই তিনটি দিকের বিস্তৃত আলোচনার পর ফ্রেইরি বললেন, “সংস্কারমুক্ত মানবিক ও মুক্তিকামী শিক্ষাবিজ্ঞান হিসেবে নিপীড়িতদের এই শিক্ষাপদ্ধতির দুটি স্তর আছে। প্রথম পর্যায়ে নিপীড়িতদের দমিয়ে রাখার ব্যবস্থাগুলোকে উন্মুক্ত করে দেওয়া, এবং চর্চা (প্র্যাক্সিস)-এর মধ্য দিয়ে দুনিয়াটাকে বদল করতে হবে, সেই কাজে নিজেদের দায়বদ্ধ করে তোলা। দ্বিতীয়স্তরে, যখন নিপীড়নের বাস্তবতা আর নেই, তখন এই শিক্ষাবিজ্ঞান আর শুধু নিপীড়িতের থাকে না, চিরস্থায়ী মুক্তির প্রক্রিয়ায় তা সমস্ত জনগণের শিক্ষাবিজ্ঞান হয়ে দাঁড়ায়।”
দ্বিতীয় অধ্যায়ের আলোচনার প্রধান কেন্দ্র হল, ফ্রেইরি বিখ্যাত ‘ব্যাঙ্কিং থিওরি’। এখানে মনে করা হয় ছাত্ররা হল ‘ফাঁকা পাত্র’ আর শিক্ষকদের কাজ এই ফাঁকা পাত্রকে যান্ত্রিক ভাবে ভরে তোলার। শিক্ষা এইভাবে পরিণত হয় গচ্ছিত রাখার কাজে। ছাত্ররা হল ভাণ্ডার আর শিক্ষক হলেন আমানতকারী। এই পদ্ধতির একটা দিক হল, এতে ছাত্রদের সৃজন ক্ষমতাকে যতদূর সম্ভব কমিয়ে দেয়, চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা বিলুপ্ত করে দেয়। এমনকি ‘মানবিকতাবাদী’ অবস্থানকেও মুনাফা লাভের পরিস্থিতি কায়েম করে রাখার জন্যে নিপীড়করা ব্যবহার করেন। ফ্রেইরি এই ব্যাঙ্কিং পদ্ধতি নিয়ে যে দশটা বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেছেন তা যেন আমাদের রাজ্যের ক্ষেত্রেও সমান ভাবে প্রযোজ্য।
তৃতীয় আর চতুর্থ অধ্যায় জুড়ে রয়েছে নিপীড়িতের শিক্ষাবিজ্ঞানের রূপরেখা। ডায়ালগ বা কথোপকথন তত্ত্ব কীভাবে নিরন্তর স্বাধীনতা বা মুক্তির চর্চার সহায়ক হয়ে উঠতে পারে, মানুষের সঙ্গে বিশ্বের সম্পর্ক কীভাবে গড়ে উঠতে পারে, সৃজনশীল-বিষয়মূল খুঁজে নেওয়ার প্রয়াস আর চর্চা থেকে শেষ পর্যন্ত সহযোগিতা, ঐক্য, সংগঠন এবং সাংস্কৃতিক সমন্বয়ে পৌঁছনো যায় তার রূপরেখা এই দুই অধ্যায়।
তৃতীয় দুনিয়ার দেশগুলোয় ফ্রেইরি-চর্চা শুরু হয়েছে, শুরু হয়েছে আমাদের এখানেও। ফ্রেইরিকে নিয়ে কাজ করার জন্য তৈরি হয়েছে ‘ইন্ডিয়ান পাওলো ফ্রেইরি ইনস্টিটিউট’, তবে এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান কাজকর্ম নিয়ে কোনো খবর তেমন পাই না। একসময় কিছু অনুবাদ প্রকাশ করেছিল এই সংস্থা। বছর পাঁচেক আগে বাংলায় অনূদিত হয়েছে ‘কালচারাল অ্যাকশন ফর ফ্রিডম’ (সবিতা বিশ্বাসের অনুবাদ, প্রকাশক: মনফকিরা), দীক্ষা এডুকেশন ট্রাস্ট প্রকাশ করেছে সলিল বিশ্বাসের লেখা ‘ফ্রেইরি চর্চা: পাঁচ কথা’। শ্রমজীবী হাসপাতালের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত শ্রমজীবী বিদ্যালয়ে ফ্রেইরির পেডাগজিকে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। আমাদের চাহিদার তুলনায় এই সব কাজ বড়োই অপ্রতুল। আরও বেশি করে ভাষান্তরিত হোক পাওলো ফ্রেইরি, যাতে শিক্ষকরা অনেক বেশি অবগত হতে পারেন নিপীড়নের স্বরূপ সম্বন্ধে, শিক্ষক হয়েও যে আমরা আসলে নিপীড়কের পদাঙ্কই অনুসরণ করছি, সে নিয়ে স্পষ্ট ধারণা হোক আমাদের। যত দ্রুত সম্ভব শুরু হোক ব্যাঙ্কিং পদ্ধতিকে সরিয়ে প্রকৃত শিক্ষার দিকে পা ফেলা।
নিপীড়িতের শিক্ষা বিজ্ঞান : পাওলো ফ্রেইরি।
অনুবাদকঃ তীর্থঙ্কর চন্দ। শুভঙ্কর চন্দ।
প্রকাশক ঃ তথ্য তক্কো অণুগ্রন্থমালা
উধারবন্দ কাছাড় আসাম
পেপার ব্যাক পৃষ্ঠা ২৭৬ দাম ২৭৫/-