সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
আশি সালের শেষার্ধে PUCL অফিস ঘর ৩৫ বি নির্মল চন্দ্র স্ট্রিট থেকে চলে আসে কালধ্বনির ঘরে। ২/১ এ, আশুতোষ শীল লেন। দেবাশিস আইচের সঙ্গে কালধ্বনির পরিচয় সেই সূত্র ধরেই। সেসময় অন্য অনেকেরই ছিল আসাযাওয়া। ব্যক্তি ও সংগঠন। চেনাজানার গণ্ডি বেড়েই চলত। মতামতের ভিন্নতা বা অপরিচিতির অবস্থানও মান্যতা পেত। এমন এক সহজতায় দেবাশিস আইচ আড়ালে চলে গেল, সামনে এলো বাচ্চু।
৬ ফুট উচ্চতা আর ‘Baritone voice’র বাচ্চু ছিল আদ্যন্ত রাজনৈতিক যুবক। মানবাধিকার সংগঠন পিউসিএল-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগে, সে ছিল পিসিসি- সিপিআইএমএল এর সদস্য। স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াকালীন সে ছেলে এসএফআই আর ছাত্রপরিষদের সঙ্গে টক্কর দিয়ে কলেজের ছাত্র সংসদের সম্পাদক ও পরে সভাপতিও হয়।
সংগঠন করাটা বাচ্চুর বেশ স্বাভাবিক ছিল। নিজস্ব প্রত্যয়ে এবং অনেকের সক্রিয়তার আশ্বাসে উদ্দীপ্ত বাচ্চু কিছুকালের মধ্যেই পিউসিএলএর সম্পাদকও হয়।। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৪ পিইউসিএল এর ঘর আর কালধ্বনি পত্রিকার অফিস ঘর একই জায়গায় থাকায় সুবিধা হয়েছিল। দুটি সংগঠনই সমৃদ্ধ হয়েছিল, সমৃদ্ধ করেছিল একে অপরকে। পিইউসিএল-এর পত্রিকা ‘নাগরিক অধিকার’ বের হতো এই সময়।
তারও আগে ১৯৮৮ সালের ২৪ জুন মুর্শিদাবাদ জেলার কাটরা মসজিদ ঘিরে ঘটে যাওয়া ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ অনুসন্ধানে পিইউসিএল-এর নেতৃত্বে ৮, ৯ ও ১০ জুলাই মুর্শিদাবাদ জেলার বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বিস্তারিত অনুসন্ধান হয়। একটি রিপোর্টও প্রকাশিত হয়। দাঙ্গা নয়, সংগঠিত হত্যা। প্রতিবাদ-প্রতিকার কিছু হয়নি। কেননা বামফ্রন্টের তখনও উঠতি বয়স।
কাটরা মসজিদ ছাড়াও পিইউসিএল ভাগলপুর দাঙ্গার বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করতে সক্ষম হয়েছিল। ভাগলপুর দাঙ্গা নিয়ে বাচ্চু, দেবাশিস আইচ প্রকাশ করেন দহননামা। প্রকাশক, কালধ্বনি।
সেসময় বেশ কিছু ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে কখনো পিউসিএল কখনোবা কালধ্বনি অনুসন্ধান করে। আরামবাগ-মসিনাপুর এবং গড়বেতা সহ বেশকিছু দাঙ্গা ও বাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অনুসন্ধান হয়েছিল। রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল কালধ্বনি পত্রিকায়।
১৯৯৪ সালের পর থেকে পিউসিএল আবার ৩৫ বি নির্মল চন্দ্র স্ট্রিটে ফিরে যায়। ততদিনে বাচ্চুও গ্রামীণ সংবাদ সংগ্রহে আগ্রহী হয়ে ওঠে। স্টেটসম্যান পত্রিকার বেস্ট রুরাল জার্নালিস্ট আওয়ার্ড পায়। কাজও করেছে সে। টিভি চ্যানেল, সংবাদমাধ্যম, এনজিওধর্মী ভিডিও ম্যাগাজিনে, পুরুলিয়া, আসামে।
একসময়ে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার, খুঁজে নেয়ার তাগিদে বিকল্প মাধ্যমে আগ্রহী হয়ে ওঠে। ‘গ্রাউন্ড জিরো’র অন্যতম প্রতিষ্ঠা সদস্য সে। এবং ‘আমাকে জাগিয়ে রাখো’, ‘রাত্রিকাল রাত্রিকথা’ কবিতার বইয়ে বা ‘মায়া বন্দরের রূপকথা’ উপন্যাস বা ‘নিমকাঠির জীবন’ এর মতো গদ্যের মধ্যে সে নিজেকে আবিষ্কার করে চলে।
শারীরিক অসুস্থতা ছিল, অসুখী ছিল না, অন্তত বাইরের মেলামেশা কাজের জগতে। হারিয়েছে অনেক কিছু, হারানোতে হার মানেনি সে।
হার-না-মানা নিয়েই চলে গেল সে। বড্ড আগে। অসময়ে।
কালধ্বনি পত্রিকায় দেবাশিস লিখেছে বিভিন্ন সময়ে । গদ্য, পদ্য, প্রবন্ধ, রিপোর্ট। কালধ্বনিতে ওর প্রথম লেখা়, মার্চ ১৯৮৯-এ। চতুর্থ বর্ষ, প্রথম-দ্বিতীয় সংখ্যায়। দেবাশিস তখন ২৮।