সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
জলের রংটি সবুজ এবং কালচে
(যেন) বিছিয়ে রয়েছে মনোরম এক গালচে
ভাসমান দুটি পরিযায়ী হাঁস আঁকা
তারপরে আর কিছু নেই... শুধু ফাঁকা।
ওইদিকে গেলে আকাশ ছুঁয়েছে সন্ধে
সারস ডাকছে মাছেদের ভাইবোনদের।
রোজ দুই বেলা পার হয়ে যাই খাঁড়ি
জলের প্রকৃত পাশে আমাদের বাড়ি।
আমরা দুজনে ভুবনডাঙায় বন্দি
বয়স বাড়ছে, অবসরে আঁটি ফন্দি
কোথায় পালাব... জল উঠে আসে পাড়ে
যাবৎ-শরীর ছুঁয়ে যায় নিঃসাড়ে।
যুদ্ধ অথবা শান্তিজনিত অশালীন পরিহাসে
বুদ্ধ কখনও ক্রুদ্ধ হন না, গোপনে মুচকি হাসেন।
করুণায় তাঁর আঁখিপল্লব নত, শরতের মত
করতলে নীল পদ্ম, ছদ্ম প্রেমেতে মর্মাহত।
ছেঁড়া-ছেঁড়া মেঘ, আলোর প্লাবনে দ্রব নভ-নীলিমাতে
ওড়াউড়ি করে, বনতল জাগে স্নেহ-কর-সম্পাতে।
ওড়াউড়ি করে মেঘেদের নিচে নির্বিকল্প ড্রোন
আমার ব্য-থা-আ-র পূজা হয়নি-ই সমাপন...
ধ্বংস তোমাকে আহত করে না, উদাসীন সন্ন্যাসী?
বুঝি না, অধরে খেলা করে মৃদু রহস্যময় হাসি।
১
বন্ধুরা রয়েছে বলে পৃথিবী এখনও
বাসযোগ্য লাগে। ‘বাসযোগ্য’ শব্দটাকে
কেটে দিয়ে ‘শ্বাসযোগ্য’ লিখি।
চরম ফিনিকি – বন্ধুরা গালি দেয় – শালা বাল্মীকি!
বন্ধুরা রয়েছে বলে রোগতাপ ফিরে চলে যায়।
২
পোস্ট-কোভিড শব্দেরা ওঁত পেতে আছে
বারান্দায়, একেকটি পাকা শয়তান
ছুতো খুঁজছে ভিতরে আসার...
কার আঙুল খেলা করছে হারমোনিয়ামে
ক্রমশই বিলম্বিত হচ্ছে লয় তান।
৩
ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় বৃষ্টিপাত হলে
যে নদী ভাসিয়ে দিত ইতিপূর্বে রাস্তাঘাট
রোয়াক, দালান, সে এখন সমতলে নেমে
কাকচক্ষু হ্রদ হয়ে গেছে। ইচ্ছে করে সোফাসেটে
পাশাপাশি বসে, তার সাথে পাখিদের ওড়াউড়ি দেখি।
যে নগরে টগর ফোটে না, দুটি সামুদ্রিক হাঁস
বলে গেল চুপিচুপি, “কোনও কথা বোলো না বেফাঁস।
দেওয়ালেরও কান আছে, যদিও সে চোখে বেঁধে ঠুলি
সামাজিক প্রয়োজনে করে যায় আকুলি বিকুলি।”
“এদেশে ফলন হয়,”ধরো যদি কেউ মিছিমিছি
বলে ফেলে, “বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বীচি,
কম করে।” দেওয়াল কখনও তাকে করে নাকো ক্ষমা
যতই বলো না, “প্রভু, করেছেন ভুল তর্জমা,
তেরো যে অপয়া কত, সে বিচার কখনও করিনি
এমনকি কাঁকুড়ের কাছে আমি মনে মনে ঋণী।
তারপরও প্রভুপাদ, পড়ে থাকে এক হাত ফাঁকি
সেটুকু গুটিয়ে নিলে শেষ হয় করুণ মাজাকি...”
যতই সাধো না তুমি, মুখে ফেনা, দেওয়াল দোলে না
অজর অচল থাকে, অনুযোগ কানেও তোলে না।
১
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সব মানুষেরই রহস্যময়তা কমে আসে। যেন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পারদ-চটা আয়না। আরপার দেখা যায়।
আয়না ব্যাপারটা এমনিতে বেশ রহস্যময়। একটা দ্বিমাত্রিক কাচের টুকরোর ভিতর ত্রিমাত্রিক পৃথিবী। তবে ওই পারদের আড়ালটা নিতান্ত জরুরি। যতক্ষণ প্রলেপ থাকে, কেউ সামনে এসে দাঁড়ালে ছায়া পড়ে। ভুল করে মনে হয় দ্বিতীয় বাস্তব।
পুরনো অংশত পারদবিহীন আয়নায় ছায়ার অপসৃয়মান শক্ত মুখ ভেঙেচুরে যায়। কখনও ভুতুড়ে লাগে, কখনও দুঃখিত। যে আয়না দেখে সেই আহত হয়, মনে করে ছায়াটার দোষ, পারদর্শী পারদের কথা ভুলে যায়।
বুঝতে চায় না, সচরাচর, বয়স বাড়লে পৃথিবীর সমস্ত আয়নাই রহস্য হারায়।
২
একদিন সেই সুসময় আসবে যখন আর কেউ কবিতা লিখবে না। এমনকি বেকার বাঙালি যুবকেরাও নয়। মানুষ দু-বেলা পেট ভরে ভাত খাবে, প্রেমে ব্যর্থ হবে না। দিনে রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য প্রাণপাত করবে, রাতে সোহাগ সংসার।
প্রতিটি প্রযুক্তি সফল হবে। এবং সঙ্গম। দুঃস্বপ্ন দেখে কেউ ধড়মড়িয়ে উঠে বসবে না বিছানায়। অন্ধকারে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিতে পারবে প্রিয় মানুষের শরীর।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাড়ি কামানোর সময় নিজেকে আর তেমন কদাকার মনে হবে না। (কারণ পুরনো আয়না সব ক্ষত ঢেকে দেয়।) ক্বতবেলের গাছ ফলবতী হবে। গৃহপালিত পশুরা নির্দ্বিধায় বংশবিস্তার করবে।
প্রতিবার দরজা খুললে অনিশ্চিত সংক্রমণের আশঙ্কা থাকবে না। মানুষ পিকনিক করতে যাবে দূষণহীন নদীর কিনারে। মেয়েরা উঁচু করে খোঁপা বাঁধবে আর ছেলেরা বিশুদ্ধ খেউড়।
বিশ্বাস করুন স্যর, সেদিন আর কেউ কবিতা লিখবে না। রাষ্ট্রও নিশ্চিন্তে পাশ ফিরে শোবে।
১
একদিন একজন নাবিককে জিজ্ঞেস করেছিলাম - তুমি কোনওদিন মারমেড দেখেছ? সে বলেছিল - মারমেডদের বাড়ি সমুদ্রের অনেক গভীরে। ডুবসাঁতার না জানলে সেখানে যাওয়া যায় না। যেতে যেতে যেতে যেতে সময় ফুরিয়ে যায়। দম শেষ হয়ে আসে। তাও গিয়েছিলাম দেখা করতে। দরজা খুলে তার মা বলল - সে বাড়ি নেই গো, সে বাড়ি নেই...
২
ঝুলবারান্দার রেলিং এ হাত রেখে যারা ঝুঁকে পড়ে রাস্তা পড়ত, তারা আজ কেউ নেই। এমনকি বারান্দার নিচে সাইকেল থামিয়ে যে ছেলেটা ভরদুপুরে সেরেনেড শোনাত সে এই মফসসল শহর ছেড়ে চলে গেছে কবেই। ঝুলবারান্দাওলা বাড়িগুলোই আজকাল আর চোখে পড়ে না। কত কী বদলে গেছে শহরটার। হাসপাতাল মাঠে আর সার্কাসের তাঁবু পড়ে না। ক্লাউনরাও বেমালুম বেপাত্তা। সম্ভবত তারা সবাই গোষ্ঠীপিতা হয়ে গেছে। তাদেরও সেভাবে কেউ মিস করে না।
রাষ্ট্রনেতারা ঘুমিয়ে পড়লে পৃথিবীতে পরি নামে। পাড়াবেড়ুনি পরিরা খোঁজ নেয় ভরা জ্যোৎস্নায় কাহার ওষ্ঠ্যের’পরে মুকুতা ফুটেছে। যদিও সে নিতান্তই ত্বকের নিঃশ্বাস-বাষ্প, দু-এক বিন্দু ঘাম, এক পরি অন্য পরির কাঁকালে কনুইয়ের খোঁচা দিয়ে বলে, “মা গো! মাগির ঢং দেখে মরে যাই। রাধারানি নজ্জা পেয়েছেন। দেখ, দেখ কচু পাতায় জলের মতন কেমন শিউরে শিউরে উঠছে।” অন্য পরিরা ফিক ফিক করে হাসে। বলে, “চল, ওই গানটা করি, আয় তবে সহচরী, হাতে হাতে ধরি ধরি...”
সে বড়ো সুখের সময়। মানুষের মেয়েটি চোখ নামিয়ে নেয় আর পরিরা তাকে ঘিরে ঘিরে নাচে। গুনগুন গান গায়, পরিদের গানে কথা নেই, শুধু ধুন। মেয়েটির শরীরে আগুন। পরিদের ডানার বাতাস লেগে ফুলকি ওড়ে, বাতাবি লেবুর কুঁড়ি ফুটে ওঠে। কোনও হতভাগ্য পুরুষ সেই দৃশ্যে উপস্থিত থাকলে তার স্মৃতিভ্রংশ হয়। বেচারা আসন্ন নির্বাচনের কথা ভুলে যায়। ভুলে যায় ভাইরাস। মৃত্যুভয়। অনাদি আকাশ থেকে টুকরো-টুকরো হিম ঝরে পড়ে। শীত করে। তার খুব শীত করে।