সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
১
লিখতে লিখতে ঝড় উঠেছে লিখতে লিখতে রক্ত
এখন কাঁধে বইতে পারা এমন কী আর শক্ত
অনভ্যাসের ফোঁটার মতো
সুখের পুঁতি ইতস্তত
চড়চড়ালো মালার বুকে, দুঃখতে আসক্ত
বুকে বেদন সইতে পারা এমন কী আর শক্ত
লিখতে লিখতে যেমন ফোটে দু-একটা অত্যুক্তি
২
কে আর মোছে রঙের ছিটে
বসন্তে বেশ তো কালসিটে
রইল গালে, ঘুম কপালে গ্রীষ্মাবধি উঠলো
এখন তাকে ফেরাতে, ধুম নেশার বিষও জুটলো
কিন্তু আবীর গলায় এখন জ্বলছে
মুখচোরা সেই বেলুন পেল রাক্ষুসে হৃৎপিণ্ড
আগুন খেয়ে গলছে
৩
একটি পাতা ব্যাকুল ছিল একটি ছিল ধূর্ত
আলগা হাওয়া লাগলে দুটি উড়ত
একটি ওড়ে শান্তিতে
আরেকটি বিভ্রান্তিতে
হঠাৎ কোনো ঝর্ণা দেখে জিরোয় দুটি ক্লান্তিতে
জলের বুকে ব্যাকুল পাতা, কীসের জ্বালা জুড়ত
আয়না ছিল গান ছিল
ভেতরে খান খান ছিল
লাল পাথরে ছড়িয়ে তাও টুকরো টুকরো প্রাণ ছিল
আসলে ঐ ধূর্তটিরও ভেতরে আনচান ছিল
৪
আমি কি আর তোমায় পথে থমকে দেব, নদী
জলের মধ্যে পাথর ভেসে আটকে পড়ে যদি
শ্যাওলা লাগে গায়ে মাথায় শ্যাওলা লাগে চোখে
পাথর, তখন কী উচাটন দেখতে লাগে তোকে
যেই জুটেছে বুকের ছায়া ঘোর লাগা এক ভূত
সারাজীবন ভাসিয়ে দিতে মুহূর্তে প্রস্তুত
কিন্তু যদি না ভাসিয়ে আছাড় মারো তটে
তাতেই বা কী, এ দুর্দৈবে কত জখম ঘটে
আমি কি আর, নদী, তোমায় থমকে দেব পথে
৫
হাওয়ায় কিছু দুলল না
আগল মোটে খুলল না
জয়ীর কাছে এ আন্দোলন আদতে দুর্মূল্য না
পরাজিতের পেখম এই খসা পালক ভুলল না
কিন্তু জেতা হারার মাঝে
একটি প্রাণে বেদম বাজে
প্রণয় পেষা আর্দ্র মুখ একটিবার তুলল না্
১
দরজার আড়াল দিয়ে বাবার কান্নার মতো তোমাকে দেখেছি
যেতেও পারিনি কাছে ভুলতেও পারি না বোবাফুল
চোখে ও চিবুকে যেন ক'জন্মের ঘন ছায়া, ভেঙে
তোমাকে সুন্দর আমি কখনো করিনি
এই চোখ যে দুঃখটি নাগালে পেল না
তাকে কে ধুইয়ে দেবে কে শোনায় আরোগ্যের শিস
যেতে যে পারিনি কাছে, যাব না যে সে কি ও জানে না
২
আমি যে তোমাকে চাই সে আমার মনের বিভ্রম
আসলে নিজেকে কিছু মুহূর্তের অনুগত ভেবে
হঠাৎ সিদ্ধান্তে আসি। মন, দেখো, কিছু দূর থেকে।
নিভৃতে এলেই হাতে আসে হত্যার নিখুঁত ফন্দী,
ফেরাতে পারি না, জেনো, তোমাকে যতটা কাটে গূঢ় চক্র এই
আমাকেও কিছু কম ঘায়েল করে না
৩
কারণ তখনও তুমি খুঁজে দাওনি এ জাদুসফর
শব্দের বাণিজ্যে এত গূঢ় দু;খ-বিনিয়োগরীতি
তখনও শিখিনি, তাই, নাগাড়ে হোঁচট নাভিশ্বাস
সমস্ত কবিতা আজ 'তুমি' শব্দে শুরু হয় ব'লে
তোমাকে এখনও চাই, এ ভ্রান্তিতে কখনো অহং
দিও না জাগাতে মর্মে, এসমস্ত আমারই ভেতরে
অমর পঙ্গুর মতো অহর্নিশ সম্মুখ দেয়ালে
একটি রবার বল ধাক্কা দিয়ে লুফে নেয়, অন্য কোন পথে আর বলো
তোমাকে অতীতশিল্পে, উল্লেখ না ক'রে ডাকা যায়?
৪
আমার দর্পের মধ্যে যে রয়েছে ভীতু ও ছাপোষা
তাকে তুমি চিনে ফেলবে, সে আশায় বসে থেকে থেকে
দিবসাবসান হল। এখন রাত্রির গাঢ় গান
আঠালো জ্যোৎস্নায় দেখি আটকে আছে কপালের ভাঁজে
কেন এই অকৃত্রিম সন্দেহপ্রবণ হামাগুড়ি
অনুচ্চ দর্পের মধ্যে, এতদিনে চিনে ফেলবে প্রকৃত স্বরূপ
কী উদ্গ্রীব বসে আছি, যক্ষ-হাতে সারল্য আমার
এখনো প্রহরাপ্রাপ্ত, ভেঙে ফেলো, অধিকৃত হই
৫
কী আর উপায়, তাই, আস্ত একবগ্গা প্রেমে কামড় বসিয়ে
ভেবেছি দু-টুকরো করি, সামান্য উৎকণ্ঠা কতদূর যায় যে তার প্রবাহে
আকাশে নক্ষত্র জ্বলে নেভে, গোপনে মিথ্যের পিঠ
চাপড়ে তাকে ঘুমে রাখি, স্তন্য দিই, বড়ো করি সত্যের ভ্রমেই
কোলে কোলে, ন্যস্ত থাকে কাঁধে তার নধর মাথাটি
শিশু ওষ্ঠে চওড়া ফোটে পিশাচ-হাসির রেখা, ক্রূর দৃষ্টি চোখে
নিদ্রাভান ভেঙে স্পষ্ট হয়, কিন্তু, কে আর জানায়
পিঠের প্রভূত ক্ষতি-সম্ভাবনা মানুষের সম্মুখ বাগানে
তবু কি বুঝি না তার বিন্দুমাত্র, আভাস তো অল্প অল্প পাই টের তবু
কী আর উপায়, তাই, আস্ত একবগ্গা প্রেমে কামড় বসিয়ে
ভেবেছি দু টুকরো করি, ফুরায় সামর্থ্য ফোঁটা ফোঁটা
গলায় দড়ির দাগ নিয়ে ঘুরে মরছে একা বিফলা বাহার
৬
যে সন্দেহ নিজেরই ওপর, তাকে কী দিয়ে ভোলাই
সকল আগামী পিঠে দুলে চলছে নখ ও চাবুক
সময় না দিলে তার প্রকৃতি কি চেনা যায়, চর্চার ভেতর
পুতুলেরও পেশী ফোটে, অন্তত বিশ্বাস এই মতো
যদি নাই রাখি মনে, কার জন্য ফাঁকা পড়ে আছো, তবে, মন
ধাঁধা না আলোয় কীসে মিটবে খিদে জানি না তবুও
তোমার ধারণা থেকে ক্রমে দূরে সরেছি এবার
সরেছি কি? উইয়ে খাওয়া বইয়ের ভেতরে উজ্জ্বল রয়েছে অংশত
কিশোরের পেন্সিলের টীকা, আছো সেইভাবে, আছো
পুনরায় যত্ন করে ভিন্ন অর্থে পাঠ নেবে আদিম সূর্যের
সে ক্ষমতা আছে শুধু মানুষেরই, জীবনের ঘাটে,
যে জল বন্যায় আসে সেই জলই আসে না খরায়
তা বলে তোমার থেকে এতদূরে যাব না কখনো,
যাব না কি? যে সন্দেহ নিজেরই ওপর, তাকে খাই