সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
বাইরে পুরনো দিন- ছাড়ালেই চোখে পড়ে আবছার ওপারে
ফাঁকা আবছা মাঠ, দুপুর ততক্ষণে নিভে আসে
ঢিলেঢালা হাওয়া বইছে - অবিচ্ছিন্ন, একা - অজচ্ছল,
কোন দিক চিহ্ন জেনে কটি বয়স্ক ঘোড়া দিব্যি চলেছে এঁকে বেঁকে
কবে কোন ব্যস্ততায় ঘোড়া ফেলে চলে গেছে পুরনো সহিস
আজ এ পথেই বার্তাবহ একজন পিয়ানো বাদক ---
সে আনন্দ গাইছিল
শেষে, কিনারে কিনারে সন্ধ্যা, মাঠঘাট জুড়ে ক্লান্ত গীতি।
দিন ফুরোনো দেখতে যারা বাইরে অল্প আলোয়,
তারা ভিজে শুকনো মাটিতে খুঁজলো দেবতার চোখ
তখন তো দেখার কাছে সঞ্চরণে মুগ্ধ অজবীথি
সামনে তবে এ কোন দুয়ার !
নিভৃতে আলো জ্বললো, আঁধার ফুরোলো ততক্ষণে
শুনলে না কি ওই দূর মাঠ থেকে কিভাবেই
ধানখেতের অন্ধকার শব্দ করে ওঠে
তার কোন কথা ছিল, ভাষা ছিল না কি
না হলে পথিক এসে কিভাবে যে খুঁজে নেয় অজ্ঞাত বাগান
আর প্রাণ ভরে রবীন্দ্র গায় --
ব্যতিব্যস্ত করে তোলে অনির্মিত ঘর – বাড়ি -- পথ
অনর্থক ডেকে আনে বীতশোক শ্রাবণ গাথাও ঝরঝর...
তখন তো কি এক জীবন জাগে আলোর ভেতরে কুন্ঠায়
ভেজা দিন শেষ হলে কাউকে খুঁজতে যাবো ভাবি।
মস্ত বড় ডাঙায় উঠে - শরীরে শরীর যত্নে রেখে
ব্যাকুল দু চোখে দেখি--
ঘর খুলে রাস্তা বেরিয়েছে
খুদ্কুঁড়োর সংসারে আবার আষাঢ় - কথা এলো।
মা, দাওয়ার আলোতে বসে চাল বাছছে, মাথা ঝুঁকে...
দূরত্বের রঙে মেঘ আকাশের দক্ষিণে, পশ্চিমে---
ওই কোথায় মোল্লার মাঝি সে-ও বুঝে নিতে চায় মেঘদূত
ফুলপাতার নিস্তব্ধ গাছে আড়াল করছে, দেখলে
অপু – দুর্গা -- অপর্ণা -- কাজল।
ততক্ষণে নিরিবিলি প্রান্তেই ভাঙা নদী তার হাহাকার --
ভেসে যাচ্ছে অকালের কাছে। এখন আঁধার ফুরিয়ে আসে।
সলতেটুকুর আলো তাকে আমি ঠিক বলে দেবো--
জীবন খরচ করে কিভাবে যে জীবন পুনঃ
--- ' আপন আসন আপনি লবে '।
খুদকুঁড়োর সংসারের মা- সুদর্শনার মত কিভাবে যে
অন্ধকারের প্রভুকে চিনে নেয়।
বড় বেশি শেখানো কথা তার আঁচ কতদিকে সত্যি ইতস্তত
রাস্তাঘাট ম্রিয়মান লাগে।
জীবন দাঁড়িয়ে থেকে ক্রমাগত শুনতে থাকে --
পাওয়া আর হওয়া নিয়ে দীর্ঘ এক মলিন উৎক্রোশ।
' সকল নিয়ে বসে...' তারা কখন ভাবলো - নিজেকেই চেনাটুকু
কিভাবে যে বাকি পড়ে থাকে।
যেভাবে পৃথিবীর বুকের মাঝখান থেকে --
সুদর্শনাও একদিন রাজাকে চিনতে চেয়েছিল।
আজ মানুষের গা থেকে আলো ডানা মেলে অপার্থিব চাঁদে-
আমাদের পাড়ায় পাড়ায়
পথিক কখন যে খুঁজবে তাকে !
আমাদের রাজার নিশানে আজ কিংশুক ফুল আঁকা।
তাতে মুখরিত বর্ণের উচ্ছ্বাস - সেখানেও অসহ,অস্থির...
তাঁর বজ্রটুকু ভাঙা ভাঙা - ছায়া তার মাটিতে নেমেছে
পথে উৎসব দলবেঁধে - কম্পিত উল্লাস থরথর
ধ্বজা পূজো জয়ধ্বনির নিচে, আজ কাকে প্রণাম করবো তবে !
প্রভু, সে কোন দেবতা ?
আস্তাবলে পুরনো ঘোড়ার মত অভ্যাসের দু:খ নিয়ে
কবেকার আর্তনাদগুলি একা একা। বিচ্ছিন্ন। এদিক-- ওদিক...
আমাদের কাছাকাছি শুকনো হাওয়া, সময় ফুরোনোর ধ্বনি --
একদিন সুরের কাছে কোন সারেঙ্গী বাদক এসে আমাদের মগ্ন করবে
এমন আকাঙ্খাটুকু কবে দূর প্রয়োজনে চলে গেছে।
অথচ আমাদের চাওয়ার মধ্যে, পাওয়ার বা হওয়ার এক
তীব্র কলরোল -- তাতে দূরের পাওনা নিয়ে
মানুষের যে নিরন্তর দু:খ সে কিন্তু নিজেরই।
দূরের সে চাওয়ার কথা, সে অভীপ্সার কথা বলেছিল
রক্তকরবীর বিশু --- আড়াল ডিঙিয়ে।
তখনও মানুষ কিভাবে যে আগ্রহে অদ্ভূত সময় ডেকে শোনে।
'সে-' অদ্ভূত তো জমা-ই আর কিম্ভূতটি তবে যে 'খরচ'
যক্ষপুরীতে এমন তত্ত্ব বোঝাতে কি ভীষণ ব্যস্ত অধ্যাপক - তাতে
মুহূর্তেই নন্দিনীর তীব্র অস্থির আর্তস্বর : এ তো রাক্ষসের তত্ত্ব
এমন পুরনো কথা মহল্লার অন্ধকারে
আবার রাস্তা খুঁজবে না তো !
কে তোমায় ডেকেছে শুনলে -- তার কোন শব্দদল
পথ ডেকে সত্যি চলে যায় নি তো দূরে --- মহাকাশে ?
পথ চলার দু:খ ডেকে তুমি তবে শুনে নিলে --
জীবন তো পূর্ণ নয়, পূর্ণতার দিকে এক
অনির্ভার যাত্রাই -- অন্তর্গত আমিতে পৌঁছানো।
দূর পথে গুচ্ছ গুচ্ছ নিরুপায়ের দল --
কবেকার পুরনো পরিচ্ছদের এক কোচোয়ান এলো --
পথের সারথী
তখনো দেখলে পায়ে পায়ে চলার দু:খ
কোন দু:খই পাকাপাকি বুকে বাসা বাঁধবে কেন!
জীবন কি পূর্ণ না কি? তাকে পূর্ণতার দিকে চলা ভাবতেই
খুব কাছে কে গাইলো -- 'সুখের গ্লানি সয়না যে আর '
তখন আবার শীতের করুণ হাওয়া তেঁতুলবনের নীচে।
ভাঙা ঘরে, শতচ্ছিন্ন আলোয়ান ঢাকা কাছের দু:খটুকু...
সে তবে নিজের কাছে নিজেকেই ফিরিয়ে আনার দু:খ না কি?
পৃথিবীর মস্ত এক বিকেল নিয়ে ঘরে ফেরে মেষপালক --
অবাঙ্মুখ। এখন (হেমন্ত) বুদ্ধের ঋতু তাকে চোখে রেখে
জেনে নেয়, সে কেমন কত ঈশ্বরীয়।
তখনো অবশিষ্ট না কি অপূর্ণ সখ্যতা আটকে ছিল নদীর ভাঙনে।
প্রান্ত রেখার পাশে ভেজা কিছু প্রাচীন উদ্ভিদ, ভেড়ির গন্ধও
ক'টি উচাটন হাঁস গলা তুলে ফিরে যাচ্ছে অযথা সময়ে,
পৃথিবী নামের এক প্রাচীন কোটরে।
সন্ধ্যার মুখে জাতকমালার গল্প।
ক্লান্ত মেষপালক -- এখন তো খড়ের বিছানায়
অন্য এক নিরালা বিশ্রামে।
রাত্রে নিদ্রার কাছে কিভাবে সে জানতে পারে --
প্রাত: সূর্যকালে মেষগুলি ফিরে যাবে
চিরবাতাসের সাথে, দূরে --
কাল পৃথিবীর কোথাও রঙিন মহোৎসব তবে...
যুদ্ধ পারে একদিন মনে হোল
আমাদের নিজস্ব শ্বাসে, মূলে গান মিশে আছে
তার করুনানয়ন আশ্চর্য দিশায় সাবেকি দুপুর ছেড়ে
বনানীর ছায়া জালে আশ্রয় খুঁজতে চলে যায়।
সে সময় মেঘ যদি মুখ রাখে মাটির পুলকে
যুদ্ধের পুরনো মাঠ মহাপ্রস্থানের পথেই ফিরে যাবে।
কতকাল পরে দেখবে
কি আনন্দে গলা তুলে অশান্ত হাঁসেরা বৃষ্টি গায়।