সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
ওই যে দেখা যাচ্ছে, হাড্ডি চর্মসার এক মানব অবয়ব ধীর গতিতে হেঁটে আসছে..
দরজা খোলাই ছিল, ভিজে ছাতাটা গেটের মধ্যে ঝুলিয়ে রেখে দু'ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠে এল ডাইনিংএ।
—"পুরো ভিজে গেলাম।" সে বলল।
—"ওঃ এই বৃষ্টির মধ্যে তুমি তো আজকে না আসতে পারতে!" বললাম।
—"না গো বৌদি, বাইরে থাকলেই বরং ভালো থাকি। কাল আবার মদ খেয়ে ঢ্যামনাটা সারা রাত নেত্য করেচে। কাল একশ টাকার কাজ করেচে, পুরোটাই মদ গিলে এয়েচে। দিইচি ঘা কতক মনের ঝাল মিটিয়ে "।
—"দূর করে দাওনা কেন ওই রকম কুলাঙ্গারকে।"
—"তবে কি জানো বৌদি, মন্টে আমার এমনিতে যাই হোক, আমায় মান্নি করে খুব, কোনদিন গায়ে হাত তো তোলেই নি, খারাপ কতাও কোনদিন বলে নি। দোষের মদ্যে ওই এট্টু মদ খায় আর এর-তার সঙ্গে ঝামেলায় জড়ায়।"
যার কথা বলছিলাম, ইনি হচ্ছেন আমাদের কাজের দিদি। আমরা এপাড়ায় আসা থেকে, মানে এই দীর্ঘ কুড়ি বছর এই দিদি আমাদের সংসারের গৃহকর্মে সাহায্যকারী হিসাবে রয়েছেন। আমাদের আশেপাশে আরও অন্তত ছয় সাত বাড়িতে কাজ করেন। কোন কোন বাড়িতে পঁচিশ ত্রিশ বছর ধরে কাজ করছেন।
এই বাড়ির বৌদি খুব 'ছুঁচিবাই', ওই বৌদির হাত দিয়ে জল গলে না, সেই বৌদির 'বড্ড মুখ ', অমুক দাদার 'চাউনি' ভালো না, এই রকম শতেক অভিযোগ। কোন বাড়ি পুজোর পরেই ছেড়ে দিতে চায় তো কোন বাড়ি এ-মাসটা করেই ছেড়ে দেবে এই তার ইচ্ছে। এইভাবে মাস গড়িয়ে বছর গড়ায়, অভিযোগের সঙ্গে দিদিও টিঁকে থাকে। নেহাত শয্যাশায়ী না হলে আর ছুটির বালাই নেই। তবে বছরে আড়াইটে দিন ছুটি চাই-ই। বলি- "ও দিদি, কদিন ছুটি নিয়ে কোথাও বেড়িয়ে এসো।" কিন্তু যার কাঁধে সাতটা বাড়ির কাজের দায়িত্ব সে কি করে যায়!
—"না বৌদি পরে যাব’খন"।
ছোটবেলায় হাঁটতে হাঁটতে এই পাড়ার রাস্তা দিয়ে রেললাইনের ওপারে মামার বাড়ি যাওয়ার গল্প বলে, তাই না হয় একদিন যাও। তাও হবে না, কারণ মামা, মামি অনেক কাল আগে মরে গেছে, মামাতো ভাইয়েরা সব ভিন্ন হয়েছে, এখন ওখানে গেলে সম্মানটুকু যদি না পাওয়া যায়! তাহলে আড়াইটা দিন ছুটি কিসের!?
হ্যাঁ,ওই আধখানা ছুটিটা হল রান্নাপূজোর দিন। যেহেতু পুজোর পরের দিনের রান্না আগের দিন রাত্রে করে রাখতে হয় তাই সকালটা ছুটি না নিলেও চলে যায়। দ্বিতীয় ছুটি আষাঢ় মাসের অম্বুবাচি তিথির শেষ দিনটা।
তিনদিন উপবাসের পর ওইদিন শুদ্ধ হওয়ার দিন। ঘর পরিষ্কার, কাপড় কাচা, মাথা ঘষে সাবান মেখে স্নান তারপর শুদ্ধ দেহে শুদ্ধ বসনে অন্ন গ্রহণ। তৃতীয় ছুটি ভাই ফোঁটার দিন। দিদির কথায় "ছোট বোন ভাইদের ফোঁটা দিতে আসে না, আমি বড় দিদি, আমার তো একটা কত্যব্য আচে, কিচুই তো করতে পারিনি ওদের জন্য"। দিদি বলে " দুভাইয়ের জন্য দুটো গেঞ্জি কিনেচি, আর খাসির মাংসোর দাম দেব বলেচি"।
আমি বলি, "ভাইফোঁটায় ভাইয়েরা তোমাকে কিছু দেয় না?"
` —"না না ওরা কোতায় পাবে!? ওদের সংসার আছে, রোজগারও কম।"
প্রশ্নটা করে আমি খুব অন্যায় করে ফেলেছি দিদির বলার ভঙ্গিতে সেটাই মনে হল। ভাইয়েরা তাকে একচিলতে জমি দিয়েছে ঘর বাঁধতে, যদিও সে জমি বাবার, ভাইয়েরা তো নাও দিতে পারতো! সেই কারণে ভাইয়েদের কাছে সে ঋণী। বাবার কাছেও সে ঋণী, এই ভূষুন্ডি কালো মেয়েকে সে তো পাত্রস্থ করেছিল। জামাই পাগল তা সে বুঝবে কেমন করে? পাগল বর কাজকর্ম করে না, মাঠেঘাটে ঘুরে বেড়ায়।
তোমার বর বেকার অতএব তার দায় তোমাকেই নিতে হবে। রাতদিন সংসারে গাধার খাটুনি। বিয়ের পরের বছরই মন্টে জন্মাল। মন্টে যখন সবে দুই, জন্ম হল পার্বতীর। চার বছর বয়সে বাহ্যেবমি হয়ে পার্বতী মারা যায়।
আছাড়িপিছাড়ি কাঁদে মন্টের মা। সকলে সান্ত্বনা দেয়, "তোমার একটা গেছে আর একটা তো আছে, তার মুখের দিকে চেয়ে মনটাকে শক্ত কর।" ছোট ছেলেটা যখন পেটে, পাগল গেল মরে। অগত্যা বাপের ঘরে এসে ওঠা। বাবা ওই চিলতে জমি খানা দিয়ে বলল, "নে খেটে খা ছেলে মানুষ কর"।
"বাবার জন্য খুব কষ্ট হয় গো বৌদি। আমি বড় মেয়ে হয়ে বাবার জন্যে কিছুই করতে পারিনি। বাবার শেষ সময়ে কাছে থেকে এট্টু সেবা যত্ন করারও সময় পাইনি।" -দিদির আক্ষেপ।
বাবাই বলে ক'য়ে টালির কারখানায় কাজে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। কাদা মেখে, তাকে ছাঁচে ফেলে, রোদে শুকিয়ে গুনতি করে সাজিয়ে রাখতে হবে। সকাল থেকে সন্ধে কাজ। কারখানার কাছাকাছি বাড়ি হওয়ায় কাজের ফাঁকে দুপুরে বাড়ি গিয়ে দুমুঠো ভাত খেয়ে আসা। এরমধ্যে বৃষ্টি এলে মাখা ভাত ফেলে দৌড়ে গিয়ে টালি তোলা। ইতিমধ্যে বড় ছেলে একদিন বউ নিয়ে বাড়ি ঢোকে। দিদির মুখে ছদ্ম রাগ "বউ এনেছিস খাওয়াবি কি"? আবার ওই রকম কুঁড়ে মাতাল ছেলেকে যে বিয়ে করেছে তাই ভেবে মনে মনে সে বউমার প্রতি কৃতজ্ঞ। বড় ছেলে বউমাকে ঘর ছেড়ে দিয়ে ছোট ছেলেকে নিয়ে ঠাঁই হয় বারান্দায়।
বউমাকে ঘরের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে নিজে যায় কারখানায়। বউমার জন্য বড় খারাপ লাগে, বেচারা বাপের ঘর থেকে পালিয়ে এসে বিয়ে করল তাকে একটু ভালো খেতে পরতে দিতে পারলুম না। ছোট ছেলে বাস কন্ডাকটরের চাকরি পেয়েছে। বড় সারাদিন ঘুরেফিরে রাতে মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরে। কাঁহাতক কত সহ্য করবে, তাই পোয়াতি বউ একদিন নিজের রাস্তা দেখে নেয়। ছোট ছেলেটার কাজে মন আছে। এবার দেখেশুনে ওর একটা বিয়ে দিতে হবে। বাচ্চা কাচ্চা না থাকলে ঘরের মানান হয় না। টালির বাজারে মন্দা দেখা দেওয়ায় কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই দিদির এ পাড়ায় আসা। এক বাড়ির কাজ থেকে দু বাড়ি। এই ভাবে বতর্মানে সাত বাড়ি।
ঝুলি ভরে নিয়ে আসত নিত্য নতুন গল্প। "জান বৌদি, কাল রাতে ভোম্বলটা গলায় দড়ি দিয়েছে।"
—"কে ভোম্বল?"
—"আরে শেফালীর ভাই।"
—"কে শেফালী?"
—"স্বপনের বৌ শেফালি গো।"
—"ও আচ্ছা.." -বলে চিনতে পারার ভান করেছি।
দিদির ধারণা ছিল ওদের পাড়ার প্রত্যেককে আমি চিনি। তবে বহুবার শুনে শুনে দিদিদের পরিবারের একটা ছক আমি মনে মনে তৈরি করে ফেলে ছিলাম। একদিন এসে বলল "আজকে ভোরবেলা দেখি খালপাড়ের দিকে কি ধোঁয়া, তারপর জানতে পারলুম রমেশদের গোয়ালে আগুন ধরে গেছে।" দিদির মুখ থেকে দিদির ছোট বেলার গল্প শুনতে খুব ভালো লাগত। আন্দুলের পুরানো বাসিন্দা হওয়ায় আন্দুল রাজবাড়ির অনেক গল্প দিদির কাছে শুনেছি। দিদির ছেলে ছোট বেলায় একটা দামি ঘড়ি কুড়িয়ে পেয়েছিল সে গল্পও দিদি করেছে। কি সে দামি ঘড়ি? "সেই চিমটি ঘড়ি (HMT) গো!" তবে দিদির যে কথাটা শুনে সবচেয়ে মজা পেয়েছিলাম সেটা হল, একদিন এসে বলল- "কাল আমার ভাইপো বউ এর বাপের বাড়ির কাছে খুব ঝামেলা হয়েছে, ক্লাবের ছেলেদের সঙ্গে ওই তিন আঙুল না চার আঙুল বলে ওই পাটির ছেলেদের।"
—"আরে দিদি ওটা তৃণমূলের ছেলেরা!
—"ওই একই হল, নাও তো।"
যাইহোক এইভাবেই দিন কাটছিল। কখনো সখনো পুরনো শোকে ইনিয়ে বিনিয়ে কাঁদতো, আবার পরক্ষণে ভুলেও যেত। আর একদিনের কথা না বললে দিদির গল্প অসমাপ্ত থেকে যায়। একদিন দিদি ঘর মুছছে আর ক্ষণে ক্ষণে আঁচল দিয়ে চোখ মুছছে। কাঁদছে কেন জিজ্ঞেস করাতে বলে "আজ শিখা বৌদির বাড়িতে মুসুরির ডাল দিয়ে মুড়ি খেয়ে ফেলেছি। আমি বলি তাতে হয়েছে’টা কি? দিদি বলে "আজ একাদশী তো!" বলি, না জেনে খেলে কোন দোষ নেই। "আজ তোমার জামাইবাবুর খাওয়া হবে না যে! "দিদির ভুলে মৃত জামাইবাবুর খাওয়া হবে না তাই দিদি নাকের জলে চোখের জলে।
তবে দিদির জীবনের মোক্ষম আঘাতটা আসে এইবার। ঘরগুছিয়ে সবে কাজে বেরুতে যাবে আচমকা বজ্রপাতের মতো কে যেন বলে গেল "মন্টের মা তোমার ছোট ছেলে আন্দুল রোডে গাড়ি চাপা পড়েছে.."
ওইটুকুই আর কোন কথা কানে যায়নি। এবার আর আছাড়িপিছাড়ি নয়, একেবারে নিঃশ্চুপ নিঃশ্চল। যেন রামকিঙ্করের তৈরি কোন আদিবাসী রমণীর ভাস্কর্য। "ওরে ওকে কাঁদা, তা নাহলে মরে যাবে যে"। ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ একজন বলল। "লাশটাকে নিয়ে আয়, ওর মাকে দেখা"। লাশ আনা হল মায়ের সামনে লাশের মুখের কাপড় খোলা হল। উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে যুগোপৎ উত্তেজনা না জানি লাশের মুখ কতটা বিকৃত হয়েছে, দ্বিতীয়ত তা দেখে মায়ের প্রতিক্রিয়া কি হয়! কিন্তু মা তো ছেলেকে স্বীকারই করতে চায় না। বলে না তুই আমার ছেলে হতেই পারিস না। এইতো বলে গেলি মা আমি দর্জির দোকানে যাচ্ছি পুজোর জামাটা তৈরি করতে দিয়ে আসি। খাবার চাপা দিয়ে রাখতে বললি, ফিরে এসে খাবি। তারপর-ই "খোকারে..!" বলে আর্ত চিৎকার। আর কারো মুখে কোন কথা নেই, ভিড়ের মধ্যে থেকে শুধু মহিলাদের গোঙানির শব্দ, পুরুষেরা মাথা নোয়ালো। নিজেকে সামলে নিয়ে এক মধ্য বয়সি এগিয়ে গেল "ওঠ্ মন্টের মা, মন শক্ত কর, ভেঙে পরিস নে, তোর তো মন্টে আছে, ওর জন্য তোকে বাঁচতে হবে "।
হ্যাঁ, বেঁচেছিল মন্টের মা, 2022 সাল পর্যন্ত বেঁচেছিল তার সবেধন নীলমণি মাতাল অলস ছেলে মন্টেকে বুকে আগলে। সে যেমনই হোক তাকে তো মা বলে ডাকে!
মা বলে’কয়ে ছেলেকে কাজে লাগায়, কখনো মাছের দোকানে, কখনো আলুর দোকানে কখনোবা সাইকেলের দোকানে। ছেলে কোথাও দু মাসের বেশি টেকে না। সব জায়গায় ছেলেকে বড্ড বেশি খাটায় তাই কাজ ছেড়ে দিলেও মায়ের তেমন আক্ষেপ থাকে না। মায়ের আক্ষেপ ছেলে মদ খেয়ে লিভারটা নষ্ট করে ফেলছে, মা হয়ে তাকে একটু ভালো মন্দ খাওয়াতে পারে না। কাজের বাড়ি থেকে যেটুকু ভালো মন্দ খাবার পায় নিজের পেট ভারের অজুহাত দেখিয়ে আঁচলে বাঁধে। বেশ কিছুদিন হল ছেলের কাশি হয়েছে। থুতুর সঙ্গে রক্ত। ডাক্তার বলেছে টিবি। কাজের বাড়িতে মাংস রান্না হয়। ছেলেটার জন্যে কি একটু দিতে পারে না মায়ের মন কাঁদে। পুজোয় সবার নতুন জামা কাপড় হয় ছেলেকে কিছু না দিলে হয় না। মা এক বাড়ির মাইনে ছেলের হাতে গুঁজে দিয়ে বলে- "একটা লুঙ্গি কিনে আনিস"। সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরে দেখে ছেলে ওই পয়সায় মদের আসর বসিয়েছে। সেই রাতে এই ঘটনা দিদির মনে কতটা জোরে বেজেছিল জানিনা, তবে কুন্ডু বাড়ির সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে লাঠালাঠির পর পরিণতি কি হল গতকালের সেই অর্ধ সমাপ্ত কাহিনী আজ শোনায় নি। বড় বেশি রকম চুপ ছিল। দিনের শেষে শুধু বলেছিল, বৌদি এবার পুজোয় কাপড় খেতে দিতে হবে না, টাকা দিও। হঠাৎই বেশ কিছুদিন হল দিদি কাজে আসছে না দেখে খবর নিতে যাই। বলি,
—"কি গো কাজে যাচ্ছ আসছ না কেন?"
—"শরীলটা একদম ভালো নেই গো, উঠলেই মাথা ঘুরচে,একদম বল পাচ্ছি না।"
—"তা ডাক্তার দেখাও নি কেন?
—"ডাক্তার কি দেখাব বলত, ডাক্তারের বিচুটি তো (ভিজিট-ই তো) দুশো টাকা, তাপ্পর ওষুধ।"
কাছের দোকান থেকে এক প্যাকেট দুধ আর গোটা ছয়েক ডিম কিনে দিয়ে আসি। সপ্তাহখানেক পর আবার খোঁজ নিতে যাই, সঙ্গে এক প্যাকেট দুধ, ছটা ডিম,এক প্যাকেট বিস্কুট। —"কিগো দিদি কেমন আছ?"
—"ভাল নয় গো, পা দুটো ফুলেছে, হাঁটা চলা করতে খুব কষ্ট হচ্ছে"।
খাবারের থলিটা হাতে দিয়ে বলি এই নাও এটা রাখ। দিদির মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বলে- "মন্টে তাই বলছিল দুধটা খুব সুন্দর খেতে, ওই দিয়ে দুদিন ধরে ও তিপ্তি করে দুটো ভাত খেয়েছে আর প্রতিদিন ওকে একটা করে ডিম সেদ্ধ করে দিয়েছি"।
আমি দাঁত কিড়মিড় করতে থাকি, মনে মনে বলি, আমি তো তোমাকে খেতে দিয়েছি। তোমাকে আমার প্রয়োজন। ফেরার সময় বলে আসি, "কাজ করতে না পারো, পারলে মাঝে মধ্যে গিয়ে এমনি ঘুরে এস।"
কয়েক দিন পর মন্টে এসে মায়ের মৃত্যু সংবাদ দেয়। গত রাতে টুল থেকে পড়ে গিয়ে মা আর কথা বলে নি। মাথায় বিশাল ঋণের বোঝা নিয়ে চলে গেল মন্টের মা, আমাদের কাজের দিদি। পরিবারের কারোর জন্য সে কিছু করে উঠতে পারেনি, না ভাই, না বাপ, না পাগল বর না নিজের ছেলে মেয়ের কারুর জন্য না। এই কথাগুলো ওর নিজেরই কথা। দিদির দেহের পাশে দাঁড়িয়ে আমার এই কথাগুলোই মনে হচ্ছিল।
বাড়ি ফিরে নিজের হিসেবের খাতা খুলে বসি, কিছু ঋণ আছে কিনা দেখার জন্য। দেখি খাতা উপচিয়ে পড়েছে প্রাপ্তিতে।
অলঙ্করণ : সংহিতা পাল