সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
আমি সাবিনা। আজ বিকেল ৪টের সময় ৫টি গ্রাম নিয়ে তৈরি একটি ক্লাস্টার বা গ্রাম সংঘের সভা। সে সভায় আমাকে যেতে হবে। এখন ২০২৮ এর মে মাস। গরমের সময়। মাসের ১৫ দিন কেটে গেছে। ভোর ৫টাতেই এখন যথেষ্ট আলো। আমি আমার সঙ্গী প্রকাশকে ঘুম থেকে ওঠালাম। আমরা এসময়ে মাটি, কাঠ খড় দিয়ে বানানো আমাদের দুকামরার ঘর পরিষ্কার করি। গোছগাছ করি। এরপর আমরা আমাদের গ্রামের কমিউনিটি সেন্টারে (সামূহিক কেন্দ্রে) যাই। সেখানে আমাদের মত ২০টি পরিবারের মানুষেরা আসে। ৫টা ৩০ মিনিট থেকে আধঘন্টা আমরা এখানে যোগব্যায়াম আর নাচের তালে নানা শারীরিক কসরৎ করি। এরপর আমাদের আড্ডা শুরু হয়। সেখানে ২০ থেকে ৯২ বছরের ঠাকুমাও অংশ নেয়।
প্রকাশের এখন তিন মাস রান্নাঘরের ডিউটি। স্নান করে সে আমাদের যৌথ রান্নাঘরে কাজ করতে গেছে।
সকাল ৯টায় বুক ক্লাবের মিটিং। আমরা ১১ জন এখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাস পড়ছি। আমরা সপ্তাহে তিনবার এই ক্লাবে বসি। ‘ঘরে বাইরে’ নিয়ে সত্যজিৎ রায় একটি সিনেমা বানিয়েছিলেন। সেই সিনেমা আজ আমরা দেখা শেষ করব।
৯০ টি ঘর-পরিবার নিয়ে আমাদের গ্রাম। গ্রামে এরকম প্রায় ১৫টি ক্লাব রয়েছে । গান, নাচ, ছবি আঁকা, খেলাধুলো, নাটক, পরিবেশ, রান্না, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, ইতিহাস, ভ্রমণ, জিমন্যাস্টিকস, গণিত, ভৌত বিজ্ঞান ইত্যাদি নিয়ে। আমরা বেশিরভাগই তিন থেকে চারটি ক্লাবের সদস্য। তবে কিছুদিন থাকার পর আমরা অন্য ক্লাবে যাই। অন্যরা এই ক্লাবে আসে। মানুষের আগ্রহ অনুযায়ী প্রায়শই কিছু ক্লাব তৈরি হয়। আবার কিছু ক্লাব বন্ধ হয়ে যায়।
বর্ষা আসতে এখনো কিছুটা দেরি। তাই এখন চাষবাস নেই। তবে আগামী খরিফ মরশুমে চাষের পরিকল্পনা সারা হয়ে গেছে ফেব্রুয়ারি মাসে। গ্রামের বৈঠকে। আমরা প্রাকৃতিক উপায়ে চাষ করি। এই বৈঠকে গ্রামের সবার চাষের কাজ ঠিক হয়েছে। চাষে দরকারি সম্পদ কোথা থেকে আসবে; কে, কোথায়, কি করবে ইত্যাদি। জুনের মাঝামাঝি থেকে দুই মাস আমারা অনেকেই খুব ব্যস্ত থাকব। তাই বিভিন্ন মিটিং করে কৃষি মরশুমের কাজ অনুযায়ী ক্লাবের কাজগুলি ফেরবদল করা হয়েছে।
একইভাবে যারা পশুপালন, মাছ চাষ, বনায়ন ও সংরক্ষণ, তাঁত কেন্দ্র, কাঠের কাজ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, নার্সারি, স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইত্যাদিতে কাজ করবেন - তাদেরও আগামী তিন মাসের কাজের পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে। আমরা দেখেছি, কেউ কেউ এক পেশায় কয়েক বছর কাজ করতে পছন্দ করে। আবার কয়েকজন ৬-৯ মাসের পর অন্য কাজে যেতে চায়। গ্রামে বছরে যে দুটো বড় সভা হয়ে – সেখানেই ঠিক হয় কে কি করবে।
আমাদের গ্রামের শিশু এবং কিশোর-কিশোরীরা একসঙ্গে একটি বাড়িতে থাকে। আমরা বড়রা সকাল ৮টায় ওই বাড়িতে যাই। এখানে আমাদের ৮ বছরের মেয়ে অঙ্কিতাও থাকে। ও সকালের কাজের শেষে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিল। আমরা সবার সঙ্গে এখানে প্রায় আধ ঘন্টা কথা বললাম। পরে একসাথে আমাদের যৌথ খাবার ঘরে গেলাম। আজ প্রাতঃরাশে ঝাল সুজি (পোহা) আর চাটনি হয়েছে। দারুন খেতে। খাবার ঘরে সবাই গল্পগুজবে মত্ত। খেয়েদেয়ে, নিজেদের থালা-বাসন ধুয়ে আমি বুক ক্লাবের দিকে রওনা দিলাম। আজ পিটারের পড়ার দিন। ও এক ঘন্টা বই পড়ল। পড়ার মাঝেই কয়েকজন প্রশ্ন করল, ব্যাখ্যা চাইল। সেসব নিয়েও কথা হল। পড়া হয়ে যাওয়ার পর ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাসে লেখা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, যুক্তি, বিষয়, সমস্যা নিয়ে চলল আলোচনা। আরো এক ঘন্টা। কয়েকজন বিশ্বের অন্যান্য দেশে অনুরূপ যেসব লেখা হয়েছিল তা নিয়েও কথা বলল। বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠল আলোচনাটি।
আমাদের দুই-তিন কামরার বাড়িগুলি ছোট কিন্তু খুবই উপযোগী। গ্রামের বড় বাড়িগুলি হল শিশুদের হোম, রান্না এবং খাবার ঘর, অফিস সহ কমিউনিটি সেন্টার, হল, অতিথি নিবাস বা গেস্ট রুম, খেলার ঘর, লাইব্রেরি, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ইত্যাদি। জানুয়ারি মাসে গ্রামের সভায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কোন বাড়ি এবং ভবনের মেরামত, রঙ করা এবং সংযোজন দরকার। এই কাজ দেখভালের জন্য দল তৈরি করা হয়েছিল। দরকারি সম্পদ জোগাড় করা হয়েছিল। আর বাড়িগুলির কাজ মার্চ এপ্রিল মাসে সম্পন্ন হয়েছিল। এই বছর আমরা ওরোভিল থেকে কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে পেয়েছি। তাঁরা ছাদ তৈরির কয়েকটি নতুন পদ্ধতি আমাদের শেখাবেন। গ্রামের পুরুষ মহিলা মিলে ১৪ জন স্বেচ্ছায় এই কাজ শিখতে চায়। বিশেষজ্ঞরা ১০ দিন ধরে তাদের এই বিষয়ে তত্ত্ব এবং ধারণার কথা বলবেন এবং হাতে কলমে কাজ শেখাবেন।
বই নিয়ে আলোচনার পর আমরা কয়েকজন কফি খেতে আর গল্পগুজব করতে খাবার ঘরে গেলাম। কফি শেষ হলে আমি লাইব্রেরিতে গেলাম। গ্রাম সংঘের সভায় আজকে আমাকে আলোচনা করতে হবে। আজকের আলোচনা হল শীতের জামাকাপড় নিয়ে। আমরা এখনো জেলা সদরের বাজার থেকে শীতবস্ত্র কিনি। আমি আলোচনা করব, আমাদের নিজস্ব শীতবস্ত্র তৈরির কারখানা স্থাপন করা সম্ভব কি না তা নিয়ে। আর এর কাঁচামাল, প্রযুক্তি, দক্ষতা, মোট চাহিদা ইত্যাদি নিয়ে। আজ প্রথম মিটিং। সেসব নিয়েই পড়াশুনো করতে হবে। আমি বই এবং ইন্টারনেট থেকে এ বিষয়ে পড়ব। আমি ভাবছি অন্য দিনের মত একটু আয়েশ করে অন্য কয়েকটি পত্রপত্রিকাও পড়ব; একটু ইন্টারনেটও ঘাঁটব। আমাদের কারুরই ব্যক্তিগত কম্পিউটার নেই। লাইব্রেরিতে ১০টি কম্পিউটার রয়েছে। আমরা ভাগাভাগি করে এই কম্পিউটার ব্যবহার করি।
মে মাসে ১টা থেকে ২টোর মধ্যে আমাদের দুপুরের খাবার দেওয়া হয়। দুপুরে আমি হালকা খাবার খেতেই পছন্দ করি। একটু ভাত, ডাল, একটা সবজি, আচার, দই এইসব। আমাদের খাবারের বেশির ভাগ জিনিসই বিভিন্ন গ্রাম সংঘ থেকে আসে। তবে সব গ্রামের জন্য স্থানীয় হাট থেকেও কিছু জিনিস কেনা হয়। সপ্তাহে দু দিন আমরা আমিষ খাবার খাই। আমাদের নিজস্ব মুরগি ও গরুর খামার আছে। আছে মাছের চাষ। আমরা যে গ্রামসংঘে আছি সেখানে একটি ছাগলের খামারও আছে। আমাদের পাশের গ্রামসংঘে একটি শূকর খামার আছে। গ্রামসংঘগুলি নিয়ে আমাদের গ্রাম মহাসভা বা লেভেল ২ ক্লাস্টার রয়েছে। এই গ্রাম মহাসভা ৫টি সংঘের মোট ২৮টি গ্রামের প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি। গ্রামের জন্য যেসব জিনিসপত্র তৈরি হয় সেসবের পরিকল্পনার জন্য তিন মাস অন্তর গ্রাম মহাসভার মিটিং বসে।
দুপুরের খাবারের পর আমি বাড়ি গিয়ে একটু বিশ্রাম করলাম। ঠিক তিনটের সময় সাইকেল নিয়ে গেলাম শ্রীনিবাসের বাড়ি। শ্রীনিবাসও আজকের মিটিং-এ আমাদের গ্রামের প্রতিনিধি। আমরা দুজন গ্রাম সংঘের মিটিং-এ রওনা দিলাম। মিটিং-এ ৫টি গ্রাম থেকে মোট ১৪ জন এসেছে। আমরা যথাসময়ে মিটিং শুরু করলাম। দেড় ঘন্টার মিটিং বেশ ভালো হল। এখানে আমরা সমস্যাগুলির তালিকা তৈরি করলাম। আগামী কাজগুলি ভাগ করে নেওয়া হল। আর পরের সভার তারিখ ঠিক হল। কাছের একটি গ্রামের প্রতিনিধি লীলার সঙ্গে একসাথে কাজ করতে হবে আমাকে। আমরা দুজনে মিলে ওই কাজের দিনক্ষণ ঠিক করে নিলাম। যে গ্রামে আমরা সংঘের মিটিং করলাম, সেখানে কয়েক মাস আগে কয়েকটি জল ধারণ ও তা সংরক্ষণের কাঠামো তৈরি হয়েছিল। আমরা সেগুলি দেখতে গেলাম গ্রামবাসীদের আমন্ত্রণে। আমাদের দুজনেরই মনে হল, এই কাঠামোগুলি আমাদের গ্রামের জন্যও উপযুক্ত। এরপর সন্ধ্যে ৬-৪৫ নাগাদ আমরা গ্রামে ফিরে এলাম।
আমাদের রাতের খাবারের সময় ৭-৮টা। আমরা দিনের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করার চেষ্টা করি। আর আমাদের সব গ্রামেই সৌর এবং/অথবা বায়োগ্যাস থেকে তৈরি বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। তবে বিদ্যুৎ আমরা খুব কমই ব্যবহার করার চেষ্টা করি। আমাদের ঘরগুলি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে একটি বাল্ব পুরো বাড়ি আলোকময় করে তোলে। আমি পেট ভরে রাতের খাবার খাই – কাঁচা স্যালাড, তিনটে রুটি, ডাল, সবজি – এসব দিয়ে।
আমাদের গ্রামে খুবই সাদামাটা একটি মুক্তমঞ্চ আছে। রাতে অনেকেই আমরা মুক্তমঞ্চে জড়ো হই। এখানে চাঁদের আলোয় কখনো কখনো নাটক, গান-বাজনা, নাচ ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যরা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। কখনো অন্যরাও তাদের কলাকৃতি প্রদর্শন করে। এই অনুষ্ঠানগুলি খুবই মজাদার, সুন্দর এবং বিনোদনে ভরপুর হয়।
সাড়ে নটার মধ্যে মুক্তমঞ্চ ফাঁকা হয়ে যায়। রাত ১০টায় পুরো গ্রামটিই ঘুমিয়ে পড়ে, ভোরের প্রথম আলোয় দিন শুরু করতে।
২০২০ সালে শুরু হওয়া অতিমারির ২০২২-এ সংক্রমণ তৃতীয় তরঙ্গ শেষ হওয়ার পরে ক্রমশ পৃথিবী জুড়ে ঘূর্ণিঝড়-হারিকেন-বন্যা- দাবদাহ, দাবানল, শৈতপ্রবাহ সহ নানা বিপর্যয় বাড়তে লাগলো। এর ফলে বিশ্বের অনেক তাবড় অর্থনীতি ভেঙে পড়তে শুরু করে। সারা বিশ্বে ফ্যাসিবাদী প্রবণতা দেখা দেয়। কর্তৃত্ববাদী নেতা-আমলা-পুলিশেরা নির্বিচারে নাগরিকদের ওপর সন্ত্রাস নামিয়ে আনে। এর ফলে হিংসা, দ্বেষ, হত্যা বাড়ে। বাড়ে ধর্ম, জাতপাত, বর্ণ নিয়ে বিদ্বেষও। এতে দমন পীড়ন আরো বাড়ে। ২০২৪-এর শেষের দিকে আফ্রিকা থেকে দ্বিতীয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পশু খামার শিল্প থেকে তৃতীয় মহামারি দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এই মহামারির জন্য সরাসরি, এবং আর্থিক, সামাজিক আর রাজনৈতিক ভাঙ্গনের কারণে পরোক্ষভাবে, লাখে লাখে লোক মারা যায়। এসব মিলিয়ে ২০২৬ সালের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন, ভারত, রাশিয়া, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো রাষ্ট্রগুলি ভেঙে পড়ে এবং খণ্ড বিখণ্ড হয়ে যায়। এর উপরে দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, ইউক্রেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চারটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিস্ফোরণের ফলে মানুষ ও পরিবেশের ব্যাপক তাৎক্ষণিক দুর্ভোগ এবং বিশাল দীর্ঘমেয়াদী দূষণ এবং বিপর্যয় নেমে আসে।
এক দিকে যখন শিল্প সমাজ ভেঙে পড়ছে সে সময়েই প্রকৃতিমুখী পরিমিত যাপনের ধারণাও ব্যাপক আকারে প্রচার হতে শুরু করে। সমগ্র এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা জুড়ে, হাজার হাজার আদিবাসী গ্রামে, দ্রুত একটি রাষ্ট্রহীন ভাল সমাজের বিকল্পের কাঠামোর মাধ্যমে গ্রাম পুনর্গঠন শুরু হয়। তাদের লক্ষ্য, বর্তমানের চাহিদা অনুযায়ী প্রকৃতির ছন্দে ছন্দ মিলিয়ে পরিমিত যাপনের এক নতুন পৃথিবী তৈরি। এই যাপন তারা দ্রুত শিখে নেয় জাপাতিস্তা, রোজাভা, আমিশ, কিবুৎয, মেন্দালেখা, ট্রাঞ্জিশন টাউন, ইকো ভিলেজ , সলিডারিটি/সংহতি ইকোনমিক্স-এর অভিজ্ঞতা থেকে। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি যখন অতিমারি, জলবায়ু বিপর্যয় এবং মানব হিংস্রতা বেড়েছে - এই আদিবাসী বিকল্পগুলিও বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৫ সালের শেষের দিকে লক্ষ লক্ষ লোক মারা যাওয়ায় হাজার হাজার অনাদিবাসী গ্রাম, আদিবাসীদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে ন্যায়সঙ্গত, স্বাস্থ্যকর, সুখী, যত্নবান, প্রেমময়, স্বশাসিত, এবং প্রকৃতিগতভাবে টেঁকসই স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম গড়ে তোলার দৌড়ে যোগ দেয়। আমাদের গ্রাম ছিল এই অগ্রযাত্রার প্রথম গ্রামগুলির মধ্যে অন্যতম। সংকট ২০২৬-এও ছিল। সেবছর আমাদের গ্রামে প্রায় ২৫ ভাগ লোক মারা যায়। গ্রামের পরিযায়ী কর্মীরা ফিরে আসে। শহরগুলি ভেঙে পড়ায় সেখান থেকেও কিছু লোক চলে আসে আমাদের গ্রামে। বিকল্প সঙ্গম নেটওয়ার্ক, সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট , কলকাতার সারভিস সেন্টার পরিমিত যাপন নিয়ে আগে থেকেই কাজ করছিল। এবিষয়ে তারা খুবই দ্রুত ধারণা এবং সমাধানের উপায়গুলি সকলকে জানাচ্ছিল। কঠিন হলেও আমরা খুবই তাড়াতাড়ি এইসব ধারণা আর কাজগুলি শিখে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। মনে হয় অনেকটাই শিখে নিতে পেরেছি।
পৃথিবীটা ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। অনেকেরই অনুমান মত, শিল্প সমাজের বেলুনও ফেটে গেছে। কিন্তু ২০৩০ বা ২০৫০ সালে পৃথিবীর অবস্থা আরো খারাপ হবে বলে যেসব অনুমান করা হয়েছিল, মনে হচ্ছে তা রুখে দেওয়া গেছে। দিন যাপনের গল্পে আমি যা বলিনি তা হল, গ্রামের, গ্রামসংঘের আমরা সবাই আমাদের বেঁচে থাকার এবং সমৃদ্ধির অভিজ্ঞতা আঞ্চলিক এবং আরো বৃহত্তর (যা আগে রাজ্য এবং জাতীয় স্তর বলা হত ) স্তরে বিনিময় করে চলেছি। শিল্প সমাজের এই ভেঙে পড়া এবং তার ফলস্বরূপ ব্যাপক হিংসা অনেক জীবন কেড়ে নিয়েছে। আরো নিতে পারে। আর আমাদেরকেও গ্রাস করে নিতে পারে।
তবুও আমরা আশাবাদী। আমরা ক্রমাগত শিখছি। আর ভাগ করে নিচ্ছি। আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন গান্ধী আর রবি ঠাকুর।