সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক
কালধ্বনি
In Search of a decent living
জীবনের অন্বেষণে
একটা মানুষের জন্য খুব বেশি হলে
সাড়ে তিন হাত জায়গাই লাগে
ঠিক সেই জায়গাটুকুতেই ফুটে আছে এত ফুল!
কী অদ্ভুত তাদের সৌন্দর্য, কী অসাধারণ তাদের সৌষ্ঠব
ফুটে আছে রাস্তার একপাশে সভ্য মানুষের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে
হয়ত কত শত বছরের ওপারে বিছানা পেতে ছিল
আমাদের কোনো পূর্ব পুরুষ
গাছেদের সংসারে সূর্যের আলো মেখে ভালোবেসে জড়িয়ে রেখেছিল প্রিয় সন্ততি
বুনে ছিল ফুল-লতা-প্রকৃতির এক অকৃত্রিম জগৎ
আজ কাকে দিয়ে যাবে সে উত্তরাধিকার
তুমিই বল কিয়ামত!
আসলে একা একা ভয় লাগে---
ভোরের নরম আলোয় আমার ভয়
কুয়াশা চোখ ধাঁধানো সরষে ক্ষেত
আর কপোতাক্ষ নদীর মৌরালা মাছ ,
এসব খুঁজতে খুঁজতে হারিয়ে গেল ন'কাকা
আসলে আমার কি মনে হয় জানিস
ন'কাকা হারিয়েই যেতে চেয়েছিল
তুই আসলেই আর একবার খুঁজে দেখব
এই নদী মাছ কুয়াশার দেশটাকে...
সকালে আমার বিছানায় এখন
নিমগাছ খেলা করে
আরো পুবে রোদ
ছায়ারা নড়ে-চড়ে, দোল খায়
উথাল-পাথাল ঝড় উঠল কোথাও!
বিছানার চাদর পাল্টে দিয়ে
একটা ধবধবে সাদা চাদর বিছিয়ে দিয়েছি
এতে খেলা ভালো জমে
রোদ-গাছ-জানালা-বিছানার চাদর
ফ্রেমটা বারে বারে ভেঙেচুরে যায়
আর আমার লোভ ধীরে ধীরে লম্বা হয়
ছুঁয়ে দিতে চায় ঐ ছায়া-শরীর
আর প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দিতে
আমি নির্বাসিত হই চিরতরে..
প্রতিদিনই ফিরি, ঘরে
এখানেই কি ফিরতে চাই, ফিরে ফিরে আসতে চাই?
ভিড় ঠেলে, ধোঁয়া গিলে, উগরে দেওয়া
গালাগালের ধূসর চাদর গায়ে দিয়ে!
আসলে ফিরতে নয়, পালাতে চাই; হ্যাঁ,
প্রতিদিনই পালাতে চাই নাগরিক মুখোশ খুলে ফেলে
আদিগন্ত সবুজের মধ্যে, মিঠে বাতাসের শীতল সমারোহে
যেখানে এখনও অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে জল-ধোয়া গাছ
ছায়া-আলপনা আঁকা মাটির শীতলপাটি
একমুঠো মাটি বুকে মেখে নিয়ে গেয়ে উঠতে পারি
স্বদেশপ্রেমের গান !
আজ সমস্ত নগরের দরজা বন্ধ হয়ে যাক,
বন্ধ হয়ে যাক সব সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট
আজ একবার হয়ে যাক ঘরে ফেরার গান...
গাছেদের পৃথিবীতে এসো
দুটো গাছ পাশাপাশি
ধরি একটি আনন্দ আর অন্যটি বিষাদ
আমি নিয়মিত যাই ওদের দরবারে
বাকলে কান পাতি, শুনি
মাটি থেকে শুষে নেওয়া রসের স্রোতের শব্দ
পাতা থেকে পাঠিয়ে দেওয়া জীবন-সুধা...
গাছ দুটোর নাম পাল্টে দিই এবার,
ধরবার চেষ্টা করি ব্যথা আর আনন্দের নাড়ি
দেখি আনন্দ আর বিষাদে একই সুর বাজে ;
আনন্দের কোলে সোহাগে মাথা রাখে বিষাদ,
আসলে গাছেদের মধ্যে কখনো দূরত্ব বাড়ে না!
কতদিন যাইনি গাছেদের উৎসবে,
কতদিন কতরাত গেল, পা ফেলিনি গাছেদের উঠোনে
তোমরা বলতেই পার, নিমন্ত্রণ কি পেয়েছ,
লেফাফার উপরে কি লেখা ছিল নামধাম?
যাব অতিথি হয়ে, বিনা নিমন্ত্রণে
রবাহুতের মত আড়াল থেকে শুনে নেব শাশ্বত গান
চোখ ভরে দেখে নেব দশভুজার বিস্তার, দেখে নেব
কিভাবে ওমে জড়ায় বীজ, ছিটিয়ে দেয় প্রাণ-সুধা,
লালন করে প্রাণ---
যদি ভরসা পাই তো আর একটু কাছে যাব
কান পাতবো বুকে, দু'হাত ছড়িয়ে দিয়ে
ভিক্ষা চাইব দু'এক পাত্র ক্ষমা---
হাজার হাজার চোখ কাঁপিয়ে দেবে আমার অন্তরাত্মা
প্রবল জ্বরে মেপে নিতে চাইবে আমার বাঁক বদল
আমার নিঃশ্বাস থেকে ছেঁকে নেবে অভিসন্ধির পোড়া গন্ধক---
যদি গান চাও, ছন্দ চাও, জীবন চাও,
তবে সব পথ মিশে যাক গাছেদের উঠোনে...
ফসলের বুকে জমে থাকে
কত ঘাম, বেদনা
কে খোঁজ রাখে তার,
কার রাখবার কথা ছিল?
হাতড়াই হাতড়াই ...
দেখি শুধু মাটি, আর কেউ না...
কতদিন হাঁটিনি আল পথ ধরে
ধান খেত, গোড়ায় জমে থাকা জল
হালকা বাতাস খেলে গেলে সন্ধ্যায়
বৈশাখেও চোখে মুখে শিরশিরানি জাগে
কতদিন হাঁটিনি নদীর পাড় ধরে
নুয়ে পড়া বাঁশ আর ঋজু জারুল
হাতছানি দিয়ে ডাকে এখনও
মাছরাঙাটাও ওর ইশারা জানে
কতদিন হাঁটিনি শিশিরে-ঘাসে
ধুলো পথ নিয়ে যায় আরো দখিনে
বুড়ির মাঠ, মজা পুকুর, কাঁটাঝোপ
চুপকথার মানে সময় শুধু জানে
জানিনা কোন্ পথে লেখা আছে নাম-ধাম
পৃথিবীর থানে রেখে যেতে চাই বাউল-প্রণাম